খেলাধুলার উপকারিতা বনাম অপকারিতা-আসল সত্য কি?
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? শরীরচর্চা ও খেলাধুলার
উপকারিতা কি? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সেইসাথে আজকের আর্টিকেলে থাকছে
শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
খেলাধুলা মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোথায় আছে,
" সুস্থ দেহ সুন্দর মন "। তাই শরীরকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে এবং আপনার
মন সুস্থ রাখতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার অপরিসীম।খেলাধুলা শুধু রোগ প্রতিরোধেই
সহায়ক নয় বরং আত্মবিশ্বাস শৃঙ্খলা ও সামাজিক দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতেও অত্যন্ত
কার্যকরী।
পোস্ট সূচীপত্রঃ খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা/শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা
- খেলাধুলা কি/খেলাধুলার উৎপত্তি ও ইতিহাস
- শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা কি কি
- ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
- ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
- শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
- খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ
- খেলাধুলার অপকারিতা কি কি
- খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর
- খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
খেলাধুলা কি/খেলাধুলার উৎপত্তি ও ইতিহাস
খেলাধুলা কি? কি আশ্চর্য লাগছে খেলাধুলা কি সেটা শুনে? আমরা কি আদৌ খেলার সঠিক
সংজ্ঞা জানি? খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? শরীর চর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা
গুলো নিয়ে আলোচনা করব তার আগে চলুন খেলাধুলা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
আমাদের শরীরের ভেতরে যতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে সব কিছুই নিয়ম মেনে কাজ
করে।
যেমন পৃথিবী সূর্য নক্ষত্রগুলো নিয়ম মেনে করে চলেছে। কিন্তু আমাদের শরীরের
বাইরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কি নিয়ম মত কাজ করছে? খেলাধুলা বলতে সাধারণত শারীরিক ও
মানসিক দক্ষতার সম্মানয়ে পরিচালিত এমন কিছু কার্যক্রম বোঝাই যা বিনোদন
প্রতিযোগিতার শারীরিক সুস্থতা বা সামাজিক সম্প্রীতির জন্য পরিচালিত হয়।
এটি ব্যক্তি বা দলগতভাবে খেলা যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মের
অধীনে পরিচালিত হয়। খেলাধুলা হলো একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ শারীরিক বা মানসিক কার্যক্রম
বিনোদন প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যগত উন্নতির জন্য পরিচালিত হয় এবং সাধারণত নির্দিষ্ট
নিয়ম ও কাঠামোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
খেলাধুলার উৎপত্তি ও ইতিহাস
খেলাধুলার ইতিহাস মূলত বহু প্রাচীন। মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষ বিভিন্ন
শারীরিক কষ্ট ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিনোদনের জন্য
বিভিন্ন খেলার আয়োজন করত। আদিম যুগে মানুষ স্বীকার, দৌড় এবং যুদ্ধবিদ্যার
অনুশীলন করতে গিয়ে খেলাধুলার সূচনা করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
খেলাধুলার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে
জানা যায় যে প্রাচীন সভ্যতা গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া চর্চা হতো। মানুষের
প্রথম জীবনযাত্রা ছিল শিকারের উপর নির্ভরশীল। দক্ষ শিকারীরা ভালো দৌড়াতে পারতো
লাফ দিত এবং অস্ত্র ব্যবহার করত যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার রূপ
নেয়। অস্ত্র নিক্ষেপ দূর লাভ ইত্যাদি প্রতিযোগিতা করে নিজেদের দক্ষতা যাচাই করত।
আধুনিক খেলাধুলার বিকাশঃ ১৯শ ও
স২০শ শতকে গঠিত আধুনিক ক্রীড়া সংগঠন।
- ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় যা আধুনিক ফুটবলের সূচনা করে।
- ১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিক গেমস পুনরায় শুরু হয় (আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক)
- ১৯০৪ সালে ফিফা প্রতিষ্ঠিত হয় যা ফুটবলের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
খেলাধুলার উৎপত্তি আদিম মানব সভ্যতা থেকে শুরু হয়ে আজকের আধুনিক বিশ্বে ব্যাপক
বিকাশ লাভ করেছে এটি শুধু বিনোদন বা প্রতিযোগিতা নয় বরং সামাজিক সাংস্কৃতিক ও
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব ফেলে।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা কি কি
শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা অসীম? শরীর চর্চা ও খেলাধুলা সুস্থ ও কর্মক্ষম
জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শারীরিক মানসিক ও সামাজিকভাবে ইতিবাচক
প্রভাব ফেলে। শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা যায়। শরীর চাচার মাধ্যমে আমরা
আমাদের জীবনের দৈনন্দিন চাপ ও উদ্বেগ কমাতে পারি।
বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। এজন্য আমরা এখন স্মার্টফোনের গেম খেলতে খেলতে সব
সত্যিকারের খেলা ভুলতেই বসেছি বললে চলে। কিন্তু খেলাধুলা আমাদের দেহের জন্য
অত্যন্ত দরকারই তেমনি ভাবে মনের সুস্থতার জন্যও অনেক বেশি উপকারী। আর হ্যাঁ
খেলাধুলা শুধুমাত্র ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্যই নয় বরং বড়দের জন্য খেলাধুলা অনেক
কার্যকরী।
এজন্য আমাদের ছোট বাচ্চাদের খেলার উপকারিতা শেখাতে গিয়ে নিজের ব্যাপারটাও ভোলা
যাবে না। আপনি চাইলে কাজের মধ্যেও প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সময় বের করে নিতে পারেন
খেলার জন্য। এবং তার পাশাপাশি নিজের পরিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন খেলার
ব্যাপারে। খেলাধুলা বাধ্যতামূলক না মনে করে শখের বসে গ্রহণ করুন।
এতে করে পরিবারের সাথে সবাই মিলে একসাথে খেললে পারিবারিক সম্পর্ক যেমন দৃঢ় হবে
তেমনি সময়টাও অনেক বেশি আনন্দের সাথে কাটবে। অনেক দেশেই বলতে গেলে খেলাধুলা কে
কিছু কিছু রোগের চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করছেন সকলে। খেলাধুলার যত উপকারীতা আছে তা
বলে শেষ করা যাবে না। খেলাধুলা মানুষের জীবন শক্তিকে বৃদ্ধি করে তোলে। চলুন
তাহলে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা কি কি সে সম্পর্কে
বিস্তারিত জানা যাযক-
- শারীরিক ফিটনেস বৃদ্ধিঃ খেলাধুলা শরীরের পেশি শক্তিশালী করে ও হাড় মজবুত রাখে। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। দেহের স্থূলতা ও অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত খেলাধুলা করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং আর্থ্রাইটিস এর ঝুঁকি কমে যায়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক নমনীয়তাঃ খেলাধুলা ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা ও ভারসাম্য রক্ষা পায়।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোঃ খেলাধুলা করার ফলে হরমোন নিশ্রিত হয় যা মানসিক চাপ কমায় ও আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। হতাশা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
- আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধিঃ খেলার মাধ্যমে মানুষ নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়। জয়ের অনুভূতি মনোবল বাড়াই এবং পরাজয় সহ্য করার মানসিকতা তৈরি হয়।
- মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিঃ খেলাধুলার মাধ্যমে কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা তৈরি হয়। শেখার ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে।
- ধৈর্য ও শৃঙ্খলা শেখায়ঃ নিয়মিত অনুশীলন ধৈর্য ও শৃঙ্খলার মানসিকতা গড়ে তোলে। লক্ষ্য স্থির করা ও তা অর্জনের উপায় শেখায়।
- দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ দলগত খেলাধুলার মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার মানসিকতা গড়ে তোলে। নেতৃত্ব ও যোগদান দক্ষতা বাড়ে।
- বন্ধুত্ব ও সামাজিক সংযোগঃ খেলাধুলা মানুষকে একত্রিত করে এবং নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করতে সাহায্য করে। সামাজিক দক্ষতা উন্নত করে ও দলগত কাজের অভিজ্ঞতা দেয়।
- একাগ্রতা ও অধ্যাবসায় বৃদ্ধিঃ নিয়মিত খেলার উদ্যাগ একাগ্রতা বাড়ায় এবং কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা গড়ে তোলে। ছাত্র জীবনে ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়ক হয়।
- প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলেঃ খেলাধুলা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলে যা পেশাগত জীবনের সহায়ক। আত্মনির্ভরশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।
- বিনোদন ও মানসিক প্রশান্তিঃ খেলাধুলা মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রশান্ত রাখে। দৈনন্দিন একঘেয়েমি দূর করে শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে। অপসর সময়ের একটি কার্যকর ও উপভোগ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে নিয়মিত খেলাধুলা করলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের উন্নতি ঘটে।
ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা জানেন কি? একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে
"স্বাস্থ্যই সম্পদ/স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল"। সভ্যতাতো তার নিজের নিয়মে
উন্নতির পথে হেটেই চলেছে। অর্থাৎ দিন দিন প্রচুর মেশিনের আবিষ্কার হচ্ছে যা
আমাদের সকল কাজকে অনেক বেশি সহজ করে তুলেছে এবং কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে
প্রাচীনকালে মানুষ যে পরিমাণ পরিশ্রম করতো সেই তুলনায় আমাদের পরিশ্রম হয় না
বললেই চলে।
কিন্তু শরীরের যেকোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপনি যদি ব্যবহার না করেন তাহলে আস্তে আস্তে
অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। আমরা যদি আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকমতো
মুভমেন্ট না করি তাহলে আমরা দিন দিন কর্ম ক্ষমতাকে হারিয়ে ফেলবো এটাই স্বাভাবিক।
এজন্য আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খেলাধুলার
গুরুত্ব অপরিহার্য।
বলা হয়ে থাকে ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ। এজন্য নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার
সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে অন্য একজন মানুষের সাথে কমিউনিকেশন করতে হয় বা কি রকম
ব্যবহার করতে হয় সেটা জানাও এবং শেখা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। যা খেলার মাঠে
যাওয়ার মাধ্যমে সকলের সাথে কমিউনিকেশনের একটা সুযোগ থাকে এবং নিজেকে ডেভলপ করার
সুযোগ তৈরি হয়।
ছাত্র জীবনে পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি থাকে সারাদিন পড়াশোনা করার পর
আমাদের মানসিক চাপ তৈরি হয় সেটা কমানোর জন্য খেলাধুলা করা জরুরী। এছাড়াও
একজন ছাত্র যদি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে হলেও ৩০ মিনিট হাটাহাটি করে তাহলে
তার মাইন্ড ফ্রেশ হবে, শরীর সুস্থ থাকবে ভালো থাকবে এবং পড়াশোনায় মনোযোগ
আসবে।
ভোরবেলা যদি হাটাহাটি করা হয় তাহলে আমাদের শারীরিক গঠন মজবুত হয়। মনে একটা
অন্যরকম প্রশান্তি আসে। এর ফলে আমাদের পড়াশোনা করার আগ্রহটা বেড়ে যায়। এছাড়াও
একজন ছাত্র চাইলে নিজের জন্য বিকেল বেলা আলাদা একটু সময় বের করে খেলার মাঠে
খেলতে যেতে পারে। মাঠে খেলতে যাওয়ার ফলে শরীরের একটা ব্যায়াম হবে।
আর এই খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মানুবর্তিতা শিখবে কিভাবে অন্যদের
সাথে বা বড়দের সঙ্গে কথা বলতে হয় সেটা জানবে এছাড়া অধ্যবসায়ী হয়ে উঠতে
সাহায্য করবে খেলাধুলা। সময়ের কাজগুলো কিভাবে সময়ের মধ্যে করতে হয় সে তার
আলাদা একটা জ্ঞান অর্জন হবে। এজন্য ছাত্রছাত্রীর মানসিক বিকাশ ও শারীরিক বিকাশ
উভয়ের জন্যই খেলাধুলা করাটা অনেক প্রয়োজন।
ছাত্র জীবন হচ্ছে শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
এই সময়টাতে খেলাধুলার অভ্যাস ছাত্রদের শুধু শারীরিক দিক থেকে নয় মানসিক ও
সামাজিক দিক থেকেও উপকৃত করে। ছাত্রদের জীবনে খেলাধুলার ভূমিকা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে তারা নানা ধরনের শারীরিক মানসিক ও নৈতিক গুণাবলী
অর্জন করতে পারে। তাহলে চলুন ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা সম্পর্কে
জেনে নিই-
শারীরিক সুস্থতা ও ফিটনেসঃ ছাত্রদের জন্য শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের পাঠ্য বইয়ের চাপ এবং দৈনন্দিন পড়াশোনার চাপ থেকে
মুক্তি দেয়। খেলাধুলা ছাত্রদের পেশি শক্তিশালী করে হার্ট ও ফুসফুসের কার্যকারিতা
বাড়ায় এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে তারা
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন শিখতে পারে যা ভবিষ্যতে তাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে
সহায়ক।
মানুষের চাপ কমানোর উদ্বেগ থেকে মুক্তিঃ ছাত্ররা সাধারণত পড়াশোনার চাপ ও
পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। খেলাধুলা তাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
শরীরচর্চার মাধ্যমে ছাত্ররা এন্ডোফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা তাদের মানসিক
প্রশান্তি এনে দেয়। ইতি তাদের উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাসকে
বাড়িয়ে তোলে।
একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধিঃ খেলাধুলা ছাত্রদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে
সাহায্য করে। বিভিন্ন খেলায় সফল হতে হলে মনোযোগী হতে হয় এবং পরিকল্পনা ও কৌশল
অনুসরণ করতে হয়। এই দক্ষতা তাদের পড়াশুনাতেও কাজে আসে কারণ তাদের কাছে লক্ষ্য
স্থির করা এবং তা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা করে ওঠে।
শৃঙ্খলা ও সময় ব্যবস্থাপনাঃ ছাত্রদের জীবনের শৃঙ্খলা এবং সময়
ব্যবস্থাপনা শেখার জন্য খেলাধুলা একটি উত্তম মাধ্যম হতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন
এবং দলের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে তারা শিখতে পারে কিভাবে তাদের সময় সঠিকভাবে ব্যয়
করতে হয়। শরীরচর্চা তাদের শেখায় কিভাবে পরিকল্পনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং
অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে হয়।
সামাজিক দক্ষতা ও বন্ধুত্বঃ খেলাধুলা ছাত্রদের মধ্যে দলগত কাজে দক্ষতা
বৃদ্ধি করে। দলবদ্ধ খেলায় অংশগ্রহণ তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা সহনশীলতা এবং
ন্যায় পরায়ণতার শিক্ষা দেয়। এটি তাদের সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে
এবং নতুন বন্ধু তৈরি করার সুযোগ দেয়। দলগত খেলাধুলার মাধ্যমে তারা শিখতে পারে
কিভাবে একে অপরকে সাহায্য করতে হয় এবং কঠিন পরিস্থিতিতে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।
নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশঃ খেলাধুলা ছাত্রদের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের
সাহায্য করে। দল পরিচালনার দায়িত্ব। কৌশলগত চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
তাদের নেতৃত্ব গুণাবলী বৃদ্ধি করে। যে ছাত্ররা খেলাধুলায় নেতৃত্ব দেয় তারা
ভবিষ্যতে সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে ভালো নেতৃত্ব দানে সক্ষম হয়।
প্রতিযোগিতার মনোভাবঃ খেলাধুলা ছাত্রদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি
করে। এটি তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আগ্রহ ও পরিশ্রমে মনোভাব তৈরি করে। ছাত্ররা
শিখে যায় কিভাবে পরাজয় কে স্বীকার করে পরবর্তী সময়ে আরো ভালো করতে হয় এবং
প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হয়।
ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয় বরং মানসিক
সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার ছাত্রদের জীবনে
আত্মবিশ্বাস, শঙ্খলা, একাগ্রতা, সহনশীলতা এবং নেতৃত্ব গুণাবলী গড়ে তোলে।
ছাত্রদের জন্য খেলাধুলা অপরিহার্য এবং এটি তাদের ভবিষ্যতের সাফল্যের পথ প্রশস্ত
করে।
ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা
ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা কি? ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা ব্যাপক।
কোথায় আছে সুস্থ দেহ সুন্দর মন। প্রাচীনকাল থেকেই খেলা অনেক বেশি প্রচলিত ছিল
ঠিকই কিন্তু সেই রকম ভাবে খেলার কোন সংস্থা ছিল না। কিংবা সেই রকম ভাবে খেলাধুলার
কোন রেওয়াজ ছিল না বললেই চলে। প্রাচীনকালীন মানুষ কোন রকম খেলাধুলা বাদেই
সারাদিন অনেক পরিশ্রম করতো।
যার ফলে আলাদা করে কোন খেলার দিকে ধ্যান দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। ব্যস্ততার এই
শহর জুড়ে সবাই যখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন আলাদাভাবে নিজেকে একটু মানসিক এবং
শারীরিক তৃপ্তির জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। আপনার কাজের জায়গা, বাচ্চা,
সংসার দেখাশোনা করা এগুলো নিয়েই হয়তো সারাদিন পার করে দিচ্ছেন। যার ফলে নিজেদের
যে মানসিক শান্তিটুকু দরকার পরে বা শারীরিক বিকাশে প্রয়োজন হয় সেটা থেকে আমরা
অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছি।
তাই মানসিক শান্তির জন্য এবং শারীরিক বিকাশের জন্য নিয়মিত প্রতিদিন কমপক্ষে হলেও
আমাদের ৩০ মিনিট খেলাধুলার পেছনে সময় ব্যয় করা উচিত। যার ফলে আমাদের মনের সকল
চিন্তা গুলো দূর হবে ও শারীরিক সমস্যা থেকে অনেক দ্রুতই মুক্তি পাওয়া যাবে। আপনি
যদি আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোরবেলায় হাঁটতে বের হন।
তাহলে নিজেদের মধ্যে কথা বলার বা গল্প করার একটু সময় পাবেন। এতে করে কি হবে? এর
ফলে আপনি আপনার পরিবারের সাথে দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হবে। সম্পর্ক
আরও সুদৃঢ় হবে। এছাড়াও আপনি যদি বিকেল বেলা নিজের জন্য একটু সময় বের করতে
পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার মাঠে খেলতে যাওয়া উচিত।
সারাদিন কর্মক্ষেত্রে থাকার ফলে আমরা যে ক্লান্ত অনুভব করি সেটাকে দূর করার জন্য
খেলাধুলার করা দরকার। এতে করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে রাত্রে ঘুম অনেক বেশি
ভালো হবে। এছাড়াও খেলাধুলা টাকা রোজগারের মাধ্যম হতে পারে। অনেক বড় বড়
সংস্থা রয়েছে যারা ফুটবল ক্রিকেট এর মত বিভিন্ন খেলার অর্গানাইজ করে থাকে। এরকম
বড় বড় সংস্থাগুলোতে অনেক মানুষ কাজ করে।
খেলোয়াররা এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের খেলায় অংশগ্রহণ করে এবং প্রচুর পরিমাণ
টাকা আয় করে। তাই আপনি যদি পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলাতে বেশি আগ্রহী হন তাহলে
চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি খেলাধুলা বেছে নেন এবং খেলাধুলাকে নিজের ক্যারিয়ার
হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এতে করে আপনি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হবেন।
বর্তমান সময়ে এই সকল খেলাধুলা গুলো অনেক মানুষের অন্নসংস্থানের মাধ্যম হয়ে
দাঁড়িয়েছে। শরীরচর্চা ও খোলাধুলা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন নিশ্চিতকরণ এবং
শারীরিক মানসিক সামাজিক এবং নৈতিক দিক থেকে আমাদের বিকাশে সাহায্য করে।
শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। শিশুদের জীবনের খেলাধুলা শুধু আনন্দের
নয়। বরং তাদের শারীরিক-মানসিক সামাজিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শিশুদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং এটি তাদের ভবিষ্যৎ
সাফল্য ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ভিত্তি গড়ে দেয়। একটি শিশু যখন জন্ম নেয়
পরিবার হচ্ছে তার প্রাথমিক শিক্ষার জায়গা।
শিশুটি যখন ছোট থেকে বড় হয় একটু একটু করে তখনই সে শিশুটিকে শারীরিক গঠন ঠিক
রাখার জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। বলতে গেলে শিশুটি খেলতে খেলতেই বেড়ে ওঠে। কিন্তু
বর্তমানে বাবা-মা অথবা অভিভাবকরা নিজেদেরকে কর্ম ক্ষেত্রে ব্যস্ত করে ফেলেন। ফলে
শিশুদেরকে আলাদাভাবে সময় দেয়া হয় না। যার ফলে বাচ্চারা ফোনের দিকে বেশি ঝুকে
পড়ছে এবং মোবাইল এ আসক্ত হয়ে পড়ছে।
এতে করে শিশুদের জীবনের প্রতি একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিশুটি শারীরিক এবং
মানসিক সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। সকলের সাথে একসাথে খেলার মাধ্যমে শিশুরা
অনেক কিছু শেখে তার মধ্যে একটা বন্ধুসুলভ আচরণ তৈরি হয়। কিভাবে সকলের সাথে মিলে
মিশে থাকতে হয় এবং কথা বলতে হয় তা শেখে।
কিভাবে বড়দের সঙ্গে কথা বলতে হয় সম্মান করতে হয় তাদের সেই শিক্ষাটুকু
নিজের মধ্যে আয়ত্ত করে। শিশুরা খেলার মাধ্যমে বাস্তব শিক্ষা অর্জন করে যেটা সে
সারা জীবন নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে। এই কারণে শিশুর মানসিক এবং শারীরিক
বিকাশের জন্য অবশ্যই খেলাধুলা করা প্রয়োজন। চলুন শিশুদের খেলাধুলাযর
প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরেকটু জানা যাক-
- শারীরিক বিকাশ এবং সুস্থতাঃ খেলাধুলা শিশুদের পেশিকে শক্তিশালী করে। তাদের দেহের গঠন উন্নত করে। খেলাধুলা হাড়ের শক্তি বাড়ায় এবং হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত রাখে। এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রম শিশুদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- মানুষের বিকাশ এবং মস্তিষ্কের উন্নয়নঃ খেলাধুলা শুধুমাত্র শারীরিক দিক নয় মানসিকভাবেও শিশুদের বিকাশে সাহায্য করে। খেলাধুলা শিশুদের মনোযোগ এবং একাগ্রতা উন্নত করতে সহায়ক। কিছু কিছু খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতা এবং কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে। এছাড়াও খেলাধুলা শিশুদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং বা অন্তরদৃষ্টি বাড়ায়। খেলার মাধ্যমে শিশু সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়ে।
- সমস্যার সমাধান এবং দ্রুত চিন্তা করার দক্ষতাঃ খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু দের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে। কৌশলগত খেলা যেমন দাবা বা অন্যান্য পাজল গেম শিশুকে দ্রুত চিন্তা করতে এবং সমস্যার সমাধান করতে শেখায়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিশেষ করে সৃজনশীল খেলাধুলা শিশুর কল্পনার শক্তি এবং সৃজনশীলতা বিকাশে সাহায্য করে।
- নতুন বন্ধু তৈরিঃ খেলাধুলা সামাজিকীকরণে সহায়ক। এতে শিশুরা নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং সহানুভূতি গড়ে ওঠে।
- শৃঙ্খলা সময় ব্যবস্থাপনা এবং কর্মের প্রতি মনোযোগঃ খেলাধুলা শিশুকে সময় ব্যবস্থাপনা শেখায় বিশেষ করে যখন তাদের খেলাধুলা এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হয়। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশু শিখে যায় কিভাবে সময় ভাগ করে কাজগুলো করতে হয়।
- দীর্ঘ জীবন ও সুস্থ জীবনঃ নিয়মিত খেলাধুলা শিশুর জীবনের মান উন্নত করে এবং তাদের দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এটি তাদের শারীরিক-মানসিক এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ
খেলাধুলার প্রতি অনীহার কারণ। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে
খেলাধুলা। আমরা আমাদের ঘরবাড়িগুলোকে সুন্দরভাবে ঝাড়ু দিয়। মন্দির মসজিদগুলোকে
পরিপাটি ভাবে গুছিয়ে রাখি। তাছাড়াও রাস্তাগুলোতে রয়েছে ট্রাফিক রুলস এর নিয়ম।
তাহলে আমাদের শরীরের বেলায় কেন এত অনীহা?
খেলাধুলার ফলে আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা কোষ, প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে গুছিয়ে
রাখা দরকার। আমাদের শরীরের মধ্যে যে সকল শিরা, ধমনী আছে এগুলো তো অনেকটা রাস্তার
মতোই। পৃথিবীর সকল রাস্তা দিয়ে যদি ট্রাফিক রুলস থাকে তাহলে আমাদের শরীরের শিরা,
ধমনী, শ্বাসনালী সকল কিছুর জন্য কেন কোন নিয়ম থাকবে না? ট্রাফিক রুলস ভঙ্গ করা
হলে এক্সিডেন্টের চান্স বেড়ে যায়।
সেই রকম ভাবেই আমাদের শরীরকে যদি ভালো রাখতে হয় তাহলে যেসব নিয়ম কানুন আছে সেসব
মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। মেনে না চললে শরীর তো খারাপ হবেই। আমাদের ঘরবাড়ি
পরিষ্কার যদি না রাখা হয় তাহলে বাড়িতে যেমন নোংরা জমে ঠিক তেমনি ভাবেই আমরা যদি
খেলাধুলা না করি তাহলে আমাদের শরীরে চর্বির সাথে নোংরা জমে।
তাই ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরের প্রত্যেকটি অংশকে সতেজ রাখাটা উচিত।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলার উপকারিতা সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি
বলুন খেলাধুলার প্রতি অনীহা করলে কি চলবে? দিন দিন খেলাধুলার প্রতি অনীহা তৈরি
হচ্ছে মানুষের। এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? এতক্ষণ শিশুদের খেলাধুলার
প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানলাম চলুন এখন খেলাধুলার প্রতি অনীহার পেছনে কিছু কিছু
কারণ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানা যায় যেমন-
- অপর্যাপ্ত অবকাঠামোঃ অনেক এলাকায় খেলার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা এবং সঠিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অভাব থাকে। স্কুল বা এলাকায় খেলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকলে অনেক খেলাধুলা থেকে বিরত থাকতে পারে।
- অতি ভার্চুয়াল দুনিয়া ও গেমিংঃ বর্তমান ডিজিটাল যুগ ইন্টারনেট এবং ভিডিও গেমসের প্রভাবে অনেক তরুণ খেলাধুলার পরিবর্তে ভার্চুয়াল গেম বা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ে। এ কারণে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
- পরিবারের অগ্রাধিকারঃ কিছু পরিবারের মধ্যে খেলাধুলার তুলনায় পড়াশোনা বা কর্মসংস্থানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবারে যদি খেলাধুলার জন্য সময় না দেওয়া হয় বা উৎসাহ করা না হয় তবে সন্তানরা খেলাধুলায় আগ্রহী নাও হয়ে উঠতে পারে।
- পর্যাপ্ত সময়ের অভাবঃ অনেক সময় দেখা যায় সামাজিক ও পারিবারিকতার কারণে খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। স্কুল, কাজ এবং অন্যান্য দায়িত্বের কারণে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
খেলাধুলার অপকারিতা কি কি
খেলাধুলার অপকারিতা কি কি? খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা/শরীরচর্চা ও খেলাধুলার
উপকারিতা এবং শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি।
স্বামী বিবেকানন্দের একটি উক্তি রয়েছে,
"যা কিছু প্রয়োজনে চেয়ে অত্যধিক তাহাই বিষ"। যেমন টেলিভিশন এর মাধ্যমে
আমরা বিভিন্ন রকমের খবর পাই, এতে আমাদের ধারণা হয় আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া
বিষয় সম্পর্কে।
কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় তথ্যের সরবরাহ কখনোই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। এমনিভাবেই
আপনি যদি অতিরিক্ত খেলা করেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই
একটি রুটিন ফলো করে মেনে চলা উচিত। কিন্তু খেলাধুলার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতায়
অনেক বেশি। আপনি যদি সাবধানে থাকেন এবং নিয়ম মেনে খেলাধূলা করেন তাহলে খেলাধুলার
সকল উপকারিতা আপনি উপভোগ করতে পারবেন।
খেলাধুলার উপকারিতা যেমন অসংখ্য তেমনি কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও হতে পারে। বিশেষত
যদি তা সঠিকভাবে করা না হয় বা অতিরিক্ত অথবা ভুল ভাবে পরিচালিত হয়। নিচে
খেলাধুলার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা আলোচনা করা হলো-
- শারীরিক আঘাতঃ অতিরিক্ত শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করলে হাড়ে আঘাত লাগতে পারে। বিশেষত যদি সঠিক পদ্ধতিতে খেলা না হয় বা পর্যাপ্ত গরম এবং কুল ডাউন করা না হয়। যেমন হাটুর ইনজুরি হতে পারে, হাড় ভেঙে যেতে পারে ইত্যাদি সমস্যা।
- অতিরিক্ত সময় ব্যয়ঃ অনেক মানুষ খেলাধুলায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন। যার ফলে পড়াশোনা কাজ বা পরিবারের দায়িত্ব পিছিয়ে পড়েন। এটি ব্যক্তিগত জীবনে অস্বস্তি এবং অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। খেলাধুলার প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ বা লক্ষ্য পূরণের দিকে মনোযোগ কমে যেতে পারে।
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগঃ বিশেষত্ব পেশাদার বা প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে। জয় পরাজয়ের চাপ খেলোয়াড়ের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হার বা ব্যর্থতার অনুভূতি মানসিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে যার ফলে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং খেলাধুলার প্রতি অনিহার সৃষ্টি হতে পারে।
- সামাজিক সম্পর্কের অবনতিঃ খেলাধুলায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। বিশেষত যদি পারিবারিক ভাষা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি উপেক্ষিত হয়। অনেক সময়ই খেলাধুলার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ সামাজিক সম্পর্ক গুলোতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করতে পারে যা সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা আনতে পারে।
- সামাজিক অপব্যবহার বা অবৈধ কার্যকলাপঃ উচ্চ পর্যায়ের খেলাধুলায় (বিশেষত পেশাদার খেলা) কখনো কখনো খেল খেলোয়াররা শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অবৈধ ড্রাগ বা ডোপিং ব্যবহার করেন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং আইনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারেন।
- নেতিবাচক আচরণের বৃদ্ধিঃ কিছু খেলোয়াড় বা দলের মধ্যে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক মনোভাব বা আচরণ দেখা দেয়। যা খেলার পরিবেশকে নেতিবাচক করে তোলে এবং সহিংসতার দিকে ধাবিত হতে পারে।
এগুলো কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা যা সঠিকভাবে না করা এবং অতিরিক্ত ভাবে খেলাধুলা
করলে হতে পারে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও যত্নের সঙ্গে খেলাধুলা
করা হলে এসব অপকারিতা এড়ানো সম্ভব
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ খেলাধুলা কিভাবে সুস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে?
উত্তরঃ খেলাধুলা সুস্বাস্থ্য উপর বেশ কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা
শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থতা অর্জনের জন্য সহায়ক। যেমন শারীরিক ফিটনেস
বৃদ্ধি করে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করে, সামাজিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা
বাড়ায় এবং দীর্ঘজীবী সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
প্রশ্নঃ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া কোনটি?
উত্তরঃ বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ক্রীড়া হলো দাবা। দাবা একটি পুরনো খেলা
যা শতাব্দি ধরে খেলা হচ্ছে এবং এটি সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে উদ্ভূত হয়। সেখানে এটি
চতুরঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। দাবার কৌশল গুলি মানসিক দক্ষতা এবং পরিকল্পনা প্রদর্শন
করে।
প্রশ্নঃ ক্রীড়া শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ ক্রীড়া শব্দের অর্থ হলো খেলা বা শরীর চর্চা। যা শারীরিক দক্ষতা,
মানুষের চেতনা এবং দলগত কাজ, ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন বা শারীরিক
উন্নতির জন্য আয়োজিত হয়। এটি সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার প্রতিযোগিতা
শখ হিসেবে পরিচালিত হয়।
প্রশ্নঃ শরীরচর্চা ও খেলাধুলার সবচেয়ে বড় উপকারিতা কি?
উত্তরঃ শরীরচর্চা ও খেলাধুলায় সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো শারীরিক মানসিক
স্বাস্থ্য উন্নয়ন এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার তার শারীরিক শক্তি এবং মনোভাবের
উন্নতি ঘটাতে পারে। যা জীবনযাপনের মান উন্নত করে।
প্রশ্নঃ আন্ত ক্রীড়া কি?
উত্তরঃ আন্ত ক্রীড়া বলতে সেই ধরনের খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতাকে
বোঝানো হয় যা বিভিন্ন দেশ বা জাতের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আন্তর্জাতিক স্তরে
আয়োজিত এবং বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করেন। এসব
প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে
শারীরিক দক্ষতা ও ক্রীড়া প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয়।
খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকে আর্টিকেলে খেলাধুলা কি/খেলাধুলার উৎপত্তি ও ইতিহাস, শরীরচর্চা ও খেলাধুলার
উপকারিতা কি কি, ছাত্র জীবনে খেলাধুলার উপকারিতা, ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলার
উপকারিতা, শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা, খেলাধুলার প্রতি অনীহার
কারণ এছাড়াও খেলাধুলার অপকারিতা কি কি, খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর, খেলাধুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব
অভিমত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমরা যদি সুস্থ থাকতে চাই তাহলে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কেননা
খেলাধুলা করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এবং দেহ সুস্থ থাকলে মনও সুন্দর থাকবে।
খেলাধূলা করার জন্য যদি আপনার বাড়ির পাশে পর্যন্ত পরিমাণ জায়গা না পান তাহলে
আপনি ভোর বেলা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। নিয়মিত খেলাধুলা করলে আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের সব কাজের শৃঙ্খলা নিয়ে আসবে। আর খেলাধুলার কিছু কিছু নিয়ম থাকে যা মেনে
চলতে হবে। কেননা সঠিক ধারণা না রেখে খেললে উপকারে যাইতে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা
বেশি থাকে।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url