কোমর ব্যাথা সারানোর ১৫টি ঘরোয়া সহজ উপায় (১০০% কার্যকরী)
কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি
আপনার জন্য। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে কোমর ব্যথার কারণ এবং কোমর ব্যথা কমানোর
ব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করব।
কোমরের ব্যথার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোমরের ব্যথায় ভোগা মানুষের সংখ্যা
নিতান্তই কম নয়। তাই চলুন দেখে নিয়া যাক কোমর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায়। এবং সেই সাথে কোমর ব্যথার কারণ ও ব্যায়াম সম্পর্কে জানাবো।
পোস্টের সূচিপত্রঃ কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায়
কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায়
কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায়। শতকরা ৯০% মানুষ কোমর ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমরা অনেক সময় যেকোনো ব্যাথা
হলেই বা কোমর ব্যথায় পেইনকিলার বা ব্যথা নাশক ঔষধ খেয়ে থাকি। এতে কিছু সময়ের
জন্য আরাম পাওয়া গেলেও মূলত এই ব্যথা থেকে যায়। পুরোপুরি চলে যায় না।
পেইনকিলার খাওয়া কোন সমাধান নয়। অনেক সময় দেখা যায় খাওয়া ছেড়ে দিলে
অনেকাংশে ব্যথা বেড়ে যায়। আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায়ে এই ব্যথাকে দূর করতে পারেন।
চলুন দেখে নেয়া যাক তাই চলুন দেখে নিয়ে যাক কোমর ব্যথা সারানোর ১৫টি কার্যকরী
ঘরোয়া সহজ উপায়।
- কোমরের ব্যথা সারাতে আদাঃ আদা কোমরের ব্যথা সারাতেই খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আদাতে রয়েছে পটাশিয়াম। আর শরীরে পটাশিয়ামের অভাব হলে নার্ভের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন আদা খান তাহলে কোমরের ব্যাথা সারাতে দারুন ভূমিকা রাখবে।
- কোমরের ব্যথা সারাতে সেঁক দেওয়াঃ আপনার যদি কোমরে ব্যথা হয় তাহলে প্রাথমিকভাবে গরম পানি দিয়ে সেক দিতে পারেন। এতে করে অনেক ভালো ফল পাবেন। এজন্য আপনি হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এই হট ওয়াটার ব্যাগের মধ্যে গরম পানি ঢেলে নিন এবং কোমরে যে জায়গায় ব্যথা সে জায়গায় এই ব্যাগ রেখে গরম সেক দিলে ব্যথা অনেকটা কমবে।
- কোমরের ব্যথা দূর করতে হলুদঃ আমাদের সবার বাড়িতেই হলুদ রয়েছে। আপনি যদি প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে কোমর ব্যথায় অনেকটা আরাম পাবেন।
- কোমরের ব্যাথা সারাতে অ্যালোভেরাঃ আমাদের অনেকের বাসাতেই এলোভেরার গাছ থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে এলোভেরা সরবত খেতে পারেন তাহলে তার কোমরের ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
- কোমরের ব্যথা সারাতে মেথি বীজঃ একটি পাত্র নিন। এতে মেথি বীজ এবং গুড়া দুধ এই দুটি উপাদান একসাথে মেশান। এখন একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। কোমরের যেখানে ব্যথা সেখানে মিশ্রণটির লাগান। এভাবে মেথি বীজ ও গুড়া দুধের মিশ্রণ ব্যথার জায়গায় লাগালে অনেকটা উপকার মিলবে।
- কোমরের ব্যথা সারাতে লেবুর শরবতঃ লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত লেবুর শরবত খেতে পারেন তাহলে তা কোমর ব্যথা সারাতে ম্যাজিকের মত কাজ করবে।
- কোমরের ব্যথা দূর করতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্যঃ কোমরের ব্যথা সারাতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দুধ, চিজ, বাদাম, ঘি, শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাদ্য রাখতে পারেন যা আপনার কোমরের ব্যথা দূর করবে।
- কোমরের ব্যথা সারাতে নারকেল তেলের ব্যবহারঃ একটি পাত্রে নারকেল তেল নিন। এই নারকেল তেলের মধ্যে কর্পূর মিশিয়ে চুলাই গরম করুন। ঠান্ডা হলে এই কর্পূর মেশানো তেল ব্যাথার স্থানে লাগিয়ে মালিশ করুন। এতে কোমর ব্যথা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে
- কোমরের ব্যথা দূর করতে সরিষার তেলের ব্যবহারঃ একটি পাত্রে সরিষার তেল নিন এ সরিষার তেলের মধ্যে রসুন কুচি মিশিয়ে চুলায় গরম করুন। ঠান্ডা হলে এই রসুন কুচি মিশানো তেল ব্যথার স্থানে লাগান এবং মালিশ করুন। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।
- কোমরের ব্যথা সারাতে পান পাতাঃ কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য পান পাতার মধ্যে ঘি লাগিয়ে হালকা গরম করুন এবং এটি দিয়ে কোমরে অথবা পিঠে সেঁক দিলে যন্ত্রণা কমবে।
- কোমরের ব্যাথা সারাতে নীলগিরি তেলঃ একটি পাত্রে পানি নিন এবং চুলায় হালকা গরম করুন। হালকা গরম হয়ে আসলে এর মধ্যে কয়েক ফোটা নীলগিরি তেল দিয়ে দিন। এখন তেলটিকে ঠান্ডা করুন এবং তেলটি ঠান্ডা হয়ে আসলে কোমরে ব্যথার স্থানে লাগিয়ে মালিশ করুন। এতে ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
- কোমর ব্যথা কমাতে আদা চাঃ কোমর ব্যথা কমাতে আদা চা অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত আদা চা খেতে পারেন যা আপনার কোমর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।
- ইউক্যালিপটাশের তেল ব্যবহারঃ আপনার কোমরের ব্যথা দূর করতে ইউক্যালিপটাশের তেল খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। তাছাড়া এই তেল বাতের যন্ত্রণা দূর করতেও সাহায্য করবে।
- এছাড়া কোমর ব্যথার জন্য মলম ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু মালিশ করা যাবে না
- এক জায়গায় বেশি সময় ধরে বসে থাকলে কোমরের ব্যথা অনুভব হতে পারে। তাই যাদের কোমরে ব্যথা রয়েছে তাদের বেশিক্ষণ কোন জায়গায় বসে থাকা উচিত নয়। এছাড়া নরম ম্যাট্রেস বা ফমের বিছানায় ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন।
কোমর ব্যথার কারণ
কোমর ব্যথার কারণ আমাদের অনেকের অজানা। কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায়। যেহেতু এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তাই আমাদের কোমর ব্যথার কারণ জানা অত্যন্ত জরুরি। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক ঠিক কি কি কারণে কোমর ব্যথা হয়। বাড়িতে কিংবা অফিসে
দীর্ঘ সময় বসে থেকে কাজ করা কোমর ব্যথার অন্যতম একটি কারণ। এ সমস্যায় বেশি
ভোগেন বিশেষ করে যারা কর্মজীবী মানুষ হয়েছেন। এছাড়াও ৩০ বছরের বেশি বয়সী
মানুষের মাঝে এই কোমর ব্যথা সমস্যা বেশি দেখা দেয়। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক
কোমর ব্যথা কারণগুলো।
- এলআইডিঃ আমাদের কোমরের ব্যথার অন্যতম শক্তিশালী একটি কারণ হলো এলআইডি। এটি এমন একটি সমস্যা যা ২৫-৪০ বয়সী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেহে হাড়ের মধ্যে যে ফাঁকা জায়গায় রয়েছে এটি ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে পূরণ করে থাকে এই ডিস্ক বা চাকতি কোনো কারণবশত বের হয়ে গেলে স্নায়ুতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। যার ফলে কোমরের ব্যথা দেখা দেয়।
- লো ব্যাক পেইনঃ লো ব্যাক পেইন এমন একটি সমস্যা যা সাধারণত যুবকদের মাঝে বেশি দেখা যায় আমাদের দেহের মধ্যে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু এই তিনটি উপাদানের কোনো কারণে যদি সামঞ্জস্য তে ব্যাঘাত ঘটে তখন লো ব্যাক পেইন হয়। কিন্তু কি কারনে এই সমস্যা হয় তার কারণ এখনো অস্পষ্ট।
- লাম্বার স্পনডোলাইসিসঃ আমাদের কোমরের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি হাড়। এ হাড় গুলা অনেক সময় বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে যদি ক্ষয় হয়ে যায় তখন তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে এ কারণে ও কোমরের ব্যথা হতে পারে।
এছাড়াও কোমর ব্যাথার অন্যান্য কারণঃ
এতক্ষণ আমরা কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায় এবং কোমর ব্যথার কারণ গুলো জেনেছি। এছাড়াও আরো অন্যান্য কারণ রয়েছে যার কারণে কোমর ব্যথার হতে পারে। চলুন এখন কোমর ব্যথার অন্যান্য কারণগুলো জেনে নেয়া যাক
- মেরুদন্ডে যদি টিউমার ও ইনফেকশন হয় তাহলে কোমরের ব্যথা দেখা দেয়।
- যদি মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে কোমরে ব্যথা অনুভব হবে।
- কোমরে ব্যথা হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া।
- একটানা হাটাহাটি করলে বা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কোমরের ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- এছাড়াও ভারী কোন কিছু বহন করলে কোমরের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম। কোমর ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। কোমর ব্যথায় আক্রান্ত রোগীরা কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় অবলম্বন
করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং কিছু কিছু ব্যায়াম
রয়েছে যা অবলম্বন করলে ৩ মাসের মধ্যে কোমর ব্যথা সেরে যেতে পারে। তাছাড়া এর
থেকে বেশি সময় ধরে যদি আপনার কোমর ব্যথা হয় এবং প্রায়ই কোমর ব্যথায় ভুগে
থাকেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কোমরের ব্যথা কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করার বিকল্প নেই। ব্যায়াম কোমরের ব্যাথা
সারাতে ওষুধের চেয়েও অনেকাংশে ভালো কাজ করে। আসুন জেনে নেয়া যাক কোমরের ব্যথা
সারাবে এমন কিছু ব্যায়ামের কথা।
- আপনার যদি কোমরে ব্যাথা শুরু হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপুর হয়ে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তা না হলে কোমর ব্যথা বাড়তে পারে। কোমরে ব্যথা হলে বিছানায় শুয়ে পড়ুন এবং একটি তোয়ালে নিন। এখন এই তোয়ালিটির রোল করুন এবং কোমরের চারিপাশ দিয়ে গোল করে বেঁধে ফেলুন। এভাবে বিশ্রাম নিন এতে কোমর ব্যথা কমবে।
- বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন এবং দুই হাত দুই পাশে রাখুন। এবং দুইপা সোজা করে রাখুন। এখন হাটু ভাজ না করে এক পা আস্তে আস্তে যতটা সম্ভব উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড রাখুন এক্ষেত্রে আপনি ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে পারেন। একইভাবে অপর পা করুন।
- এবার একইভাবে দুই পা একসাথে ওপরে তোলার চেষ্টা করুন হাঁটু ভাজ করা যাবে না। এভাবে ১০ সেকেন্ড রাখুন বা ১-১০ পর্যন্ত গুণন।
- এখন এক পা সোজা রেখে অপর পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে আস্তে আস্তে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন এবং হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরুন। একইভাবে অপর হাটু ও বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন এবং ১০ সেকেন্ড সময় ধরে করুন।
- একইভাবে এখন পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে আস্তে আস্তে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন এবং হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরুন।
- এই ব্যায়ামগুলো সকাল ও রাতে দুই থেকে তিনবার করতে পারেন। এতে করে কোমরের মাংসপেশির প্রদাহ কমবে এবং এই ব্যায়ামগুলা করার মাধ্যমে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করছি।
কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমার নিজস্ব মতামত
আজকের আর্টিকেলে কোমর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া সহজ উপায় সম্পর্কে
আলোচনা করেছি। সেই সাথে কোমর ব্যথার কারণ এবং কোমর ব্যথার সারানোর ব্যায়াম
নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোমর ব্যথা বা ব্যাক পেইনের
সমস্যকে হালকা ভাবে দেখা উচিত নয়। অনেকেই আমরা কোমর ব্যথা বা ব্যাক পেইন
সারানোর জন্য পেইন কিলার খাই। এতে সাময়িকভাবে আরাম পেলেও এ ব্যথা থেকে
যায়।
পেইন কিলার কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এজন্য বারবার পেইনকিলার খাওয়া একদমই
উচিত নয়। কোমর ব্যথা বা ব্যাক পেইন দূর করার জন্য যতটা সম্ভব ঘরোয়া উপায়
অবলম্বন করুন। এতে অনেকটা স্বস্তি মিলবে কোমরের ব্যথা দূর করবে। স্বাস্থ্যকর
খাবার খান পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এছাড়া চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হন এবং পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করুন।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url