গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা - খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন তাহলে তা গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করবে। সেইসাথে আজকের আর্টিকেলে প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
পোষ্টের সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
- কেন কিসমিস খাবেন
- প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কিনা
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ভ্রুনের সঠিক বিকাশ নির্ভর করে তার স্বাস্থ্যের উপর। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত কিসমিস খাওয়া মস্তিষ্ককে সচল রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কে বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাসে নানাবিধ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি উপাদান হল কিসমিস যা মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে যথেষ্ট অবদান রাখে।
তাহলে চলুন এখন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ১৫টি কার্যকরী উপকারিতা সম্পর্কে-
- দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত কিসমিস খেলে দাঁত ভালো থাকে। কিসমিসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ওনিয়ানলিক এসিড যা আপনার দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভকালীন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য দাঁতের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে এ সমস্যা দূর করতে কিসমিস কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কিসমিসে রয়েছে ফাইবার এবং ল্যাক্সেটিভ বৈশিষ্ট্য। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মহিলারা অনেক বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগেন। কিসমিস তাড়াতাড়ি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।
- ওজন বৃদ্ধিতেঃ কিসমিসে থাকা পুস্টি উপাদান গর্ভবতী মহিলার এবং অনাগত শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
- শরীরে শক্তি যোগায়ঃ প্রাকৃতিক গ্লুকোজের ভালো উৎস হলো কিসমিস। গর্ভাবস্থায় কিসমিস গর্ভবতী মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি যোগায় এবং পেশীকে শক্তিশালী করে তোলে। গর্ভাবস্থায় খিদে পাওয়ার মুহূর্তগুলোতে আপনি যদি কিসমিস খান তবে তা আপনার শরীরের দুর্বলতা দূর করে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
- পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করেঃ কিসমিসের মধ্যে থাকা ফাইবার উপাদানটি আপনার শরীরের পাচন ক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তুলবে। তাই গর্ভকালীন সময়ে পাঁচন তন্ত্র কে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি কিসমিস খান এবং পাঁচজন তন্ত্র কে ভালো রাখুন।
- শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেঃ কিসমিস এমন একটি উপাদান যা আপনার শরীরের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকাকে বাড়িয়ে তুলতে যথেষ্ট কার্যকরী। গর্ভকালীন সময়ে আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে অসংখ্য পরিবর্তন যার ফলে আপনার শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। কিসমিস আপনার শরীরের এই সমস্যা গুলো মোকাবিলা করে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কে বাড়িয়ে তুলতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অন্যতম একটি হলো এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করবে। কিসমিসের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
- রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তিঃ গর্ভকালীন সময়ে শরীরের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যার ফলে অ্যানিমিনিয়া বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা হতে পারে। কিসমিস হল আয়রনের একটি ভালো উৎস। তাই গর্ভকালীন সময়ে আয়রনের ঘাটতি জনিত কারণে রক্তের স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে কিসমিস অনেক উপকারে একটি খাদ্য।
- হাড় মজবুত করতে সাহায্য করেঃ যদি আপনার হাড় দুর্বল থাকে তাহলে পরবর্তীতে সেখান থেকে আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের সচেতন থাকা উচিত। কিসমিস প্রচুর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। যা হাড়ের ঘনত্ব বজাই বজায় রেখে হারকে মজবুত বা শক্তিশালী করতে অনেক বেশি কার্যকরী। হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখতে গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিসমিস অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক বেশি উপকার পাবেন।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কিসমিস নিয়মিত সেবন করলে এটায় থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়। এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধেঃ গর্ভাবস্থায় অনাগত শিশুর বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো নিউরাল টিউব ইফেক্ট। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেক বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খেতে হয়। আর কিসমিস একটি ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য যা গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- শিশুর মস্তিষ্কের গঠনেঃ গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অন্যতম আরেকটি হলো একটি শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিসমিস ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ একটি উপাদান যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে অপরিহার্য। আখরোটে থাকা পুষ্টি উপাদান শিশুর ফুসফুসের বিকাশে ও শ্বাস প্রশ্বাসের যে সমস্যা হয়ে থাকে তার ঝুঁকি কমাতে যথেষ্ট অবদান রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার দেহের কোষগুলিকে সুরক্ষা প্রদান করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এবং কিশমিশে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টোরেল মাত্রা কমিয়ে হার্টকে সুস্থ এবং ভালো রাখে।
- ভিটামিন এবং খনিজঃ কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন বি6, ফলিক এসিড, ভিটামিন পটাশিয়াম আয়রন যা মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয়।
- অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করেঃ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা আমাদের অনিদ্রা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরী। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি ইতিমধ্যে আমরা সেই সম্পর্কে জেনেছি। যদি এর সঠিক উপকারিতা পেতে চান তাহলে গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় তেমন
নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই কিসমিস খাওয়ার। সাধারণত যেকোনো ভাবেই কিসমিস খাওয়া
যায়।
সোনালী এবং কালো দুই প্রকার কিসমিসই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমরা এতক্ষণ
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ১৫টি কার্যকারী উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন
আপনাদের জানাবো সঠিক নিয়মে কিভাবে কিসমিস খেলে ভালো ফলাফল পাবেন। তার আগে চলুন
জেনে নেয়া যাক কখন কিসমিস খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
কিসমিস কখন খেলে ভালো হয়ঃ
আপনি সারাদিনই যেকোনো সময় শুকনো কিসমিস খেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ভাল ফল
পেতে চান তবে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া সব থেকে উত্তম। প্রতিদিন একটি পাত্রে
একমুঠো কিসমিস নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং সেটি সকালে অথবা সন্ধ্যায়
নিয়মিত খান তাহলে তা আপনার শরীরের জন্য উপকারী হবে। তাই ভালো ফলাফল পেতে
কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত খেতে পারেন যা আপনার শরীরের পুষ্টিগুণ
বৃদ্ধি করবে।
কিসমিস খাওয়ার কিছু সুস্বাদু উপায়ঃ
- একটি পাত্রে দুধের মধ্যে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। এইজন্য এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস ছেড়ে দিন এবং অপেক্ষা করুন। এরপর ১০ মিনিট পর কিসমিস ভেজানো দুধ খেয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেলে অনেক উপকার পাবেন।
- সালাদ দই বা ওটমিলের সঙ্গে কিসমিস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- সেমাই পোলাও ইতালি সঙ্গে কিসমিস মিশিয়ে খেলে এর স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
- একটি পাত্রে বাদাম এবং বীজ নিয়ে তার সঙ্গে কিসমিস মিশিয়ে এক হিসেবে খেতে পারেন।
কিসমিস ভেজিয়ে খাওয়ার নিয়মঃ
একটি পাত্র নিন তাতে ৪০ গ্রামের মতো কিসমিস নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর এক
গ্লাস পানির মধ্যে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন কিসমিস। সকালে খাবার খাওয়ার আগে
অর্থাৎ খালি পেটে এই ভেজানো কিসমিস এবং পানি খেয়ে নিন। কিসমিস খাবার আধা
ঘন্টার মধ্যে অন্য কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কিসমিস খাওয়ার আধা ঘন্টা
বা ৩০ মিনিটপর যে কোন খাবার খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত ভালো ফলাফল পাবেন।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিসমিস ভেজানো পানি খেলে শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর
হবে। প্রতিদিন সকালে কিসমিস খেলে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি হবে এবং শরীরে আয়রন ও
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। যারা গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যায়
ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এই ভেজানো কিসমিস খেলে স্বস্তি পাবেন। কিসমিস না
খেয়ে আপনি যদি শুধু কিসমিস ভেজানো পানি খান তাহলে তা আপনার শরীরের ভিটামিন ও
মিনারেলের চাহিদা পূরণ করবে।
শুকনো কিসমিস খাওয়ার নিয়মঃ
কিসমিস অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। তাই এটি শুকনো অবস্থায় কোন রকম সমস্যা
ছাড়ায় খাওয়া যায়। শুকনো কিসমিস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি আমাদের
শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। শুকনো কিসমিস হালকা নাস্তার সঙ্গে খাওয়া
যেতে পারে। শুকনো কিসমিস আমাদের চোখকে ভালো রাখে এবং ওজন বাড়াতে অত্যন্ত
কার্যকরী।
আমরা সাধারণত বাজার থেকে সোনালী রঙের কিসমিস কিনে থাকে। কিন্তু কালো আঙ্গুর
থেকে তৈরি হওয়া কালো কিসমিস ও অনেক উপকারী। তাই হেলদি স্নেক হিসেবে খাবারের
তালিকাই কালো কিসমিস অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এবং শুকনো কিসমিস আপনি দিনের যে
কোন সময় যেকোনোভাবে যেকোনো কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
কেন কিসমিস খাবেন
কেন কিসমিস খাবেন? প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক আপনি কেন কিসমিস খাবেন? সাধারণত কিসমিস ও আঙ্গুর একই জিনিস। কিন্তু আলুর পচনশীল একটি খাদ্য। আপনি যদি
বাজার থেকে আঙুর কিনে আনেন তাহলে তা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ ভালোভাবে রাখতে
পারবেন। কিন্তু বারবার বাজার গিয়ে আঙ্গুর কিনে আনা অত্যন্ত বিরক্তি কর একটি
বিষয়। তারপরে আবার সব জায়গাতে সব মৌসুমে আঙুর পাওয়া যায় না।
সেজন্য আঙ্গুরের পুষ্টির চাহিদা যোগান দিতে বিকল্প উপাদান হিসেবে কিসমিস
খাওয়া হয়। আঙ্গুরকে রোদে শুকানোর পর কিসমিস তৈরি করা হয়। তাই এটি সারা
বছরই পাওয়া যায় এবং বাড়িতে সারা বছর ধরে সংরক্ষণ করতে কোন সমস্যা হয় না।
তাই আঙ্গুলের বিকল্প উপাদান হিসেবে কিসমিস খেতে পারেন যা গর্ভাবস্থায় আপনার
এবং আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত তাকি আমরা জানি? যদি গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী করতে চান তবে এটি সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় কিসমিস প্রতিদিন কতটুকু খাওয়া উচিত? চলুন তাহলে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক-
আপনারা যারা কিসমিস খেতে
অনেক বেশি পছন্দ করেন তাদের অবশ্যই জানা দরকার প্রতিদিন কি পরিমান কিসমিস
খাওয়া উচিত/প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এবং কতটুকু পরিমাণ কিসমিস
খেলে ভালো উপকার পাবেন তা নিয়ে এখন আলোচনা করব।
প্রতিদিন কি পরিমান কিসমিস খাওয়া উচিত তা সম্পূর্ণভাবে আমাদের শরীরের উপর
নির্ভর করে কেননা প্রতিটি মানুষের শারীরিক এবং দৈহিক অবস্থা আলাদা আলাদা। তাই
কিছুটা নিজে থেকে বুঝে নিতে হবে যে আমাদের প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খেলে
আমাদের শরীর ভালো থাকবে। কিসমিসে মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি যা
খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি আহরণ হয়। আর আঙ্গুরকে শুকিয়ে
বানানো হয় কিসমিস।
আঙ্গুর শুকিয়ে কিসমিস বানানোর ফলে এর মধ্যে থাকা ক্যালোরি কয়েক গুণ বেড়ে
যায়। সাধারণত ১০০ গ্রাম আঙ্গুরের মধ্যে রয়েছে ৬৯ গ্রাম ক্যালরি। আর ১০০
গ্রাম কিসমিসের মধ্যে রয়েছে 299 গ্রাম ক্যালোরি। তাই কিশমিস হল ক্যালরি এবং
এনার্জি সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একজন সুস্থ স্বাভাবিক
মানুষের দৈনিক ১/৪ কাপ বা ৪০ থেকে ৫৫ গ্রাম কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
তাই দৈনিক শরীরকে সুস্থ স্বাভাবিক এবং ভালো রাখতে ৪০ থেকে ৫৫ গ্রাম অথবা
১০থেকে১৫টি বা ১/৪ কাপ কিসমিস খাওয়া উত্তম। যা আপনার শরীরে ক্যালরির
মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করবে
এবংযদি বেশি পরিমাণে কিসমিস খান তবে এটি আপনার শরীরের উপকারের বদলে অপকার
বেশি করবে। আশা করছি প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বুঝতে
পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি নিরাপদ তা আমাদের সকলের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাবার উপকারিতা কি? যেহেতু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তাই গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিরাপদ কিনা তা আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কেননা একজন মা যখন গর্ভবতী হন তখন তিনি তার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের
ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকেন।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার সম্পূর্ণভাবে
নিরাপদ। কেননা কিশমিশে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা মা ও শিশুর জন্য
অত্যন্ত ভালো। কিসমিস প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি জাতীয় একটি সুস্বাদু খাদ্য তাই
এটিকে চিনির বিকল্প হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে থাকেন । তবে বেশি মাত্রায় কিসমিস খেলে তা আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য খারাপ প্রভাব
ফেলতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে কিসমিস খাওয়া
খুবই ভালো। কিসমিস যেমন গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে
সহায়তা করবে পাশাপাশি আপনার সন্তানের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করবে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের সকলের
জানা উচিত। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। যেহেতু আজকের আলোচনার বিষয় গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা-খাওয়ার নিয়ম।তাই আমাদের গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।
অনেক সময় আমরা যে কোন খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেই এটি খাওয়া শুরু করি কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে খাবারের উপকারিতা রয়েছে তার কিছু অপকারিতা ও থাকে। যদি আপনি গর্ভাবস্থায় কি কোচ খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে না জানেন তাহলে এটি বেশ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিরাপদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায়
কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
কিসমিস আমাদের শরীরের জন্য
অত্যন্ত ভালো একটি উপকারী খাদ্য। তবে শরীরের পুষ্টি উপাদানের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনের তুলনায়
যে কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। তাই কিসমিস ও পরিমাণমতো খাওয়া
উচিত। অত্যাধিক কিসমিস গ্রহণ আপনার শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রয়োজনের
তুলনায় বেশি কিসমিসখেলে কিছু সমস্যা দেখা দিবে।
- আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিসমিস খান তাহলে তা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিবে।
- গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত কিসমিস খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- বেশি মাত্রায় কিসমিস গ্রহণ করার ফলে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- বেশি পরিমাণে কিসমিস খেলে গর্ভাবস্থায় আপনার ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। অতিমাত্রায় ওজন বেড়ে গেলে প্রসবের সমস্যা হতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে কিসমিস খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
- ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে কিসমিস খেতে হবে। কেননা আমরা জানি আঙ্গুল কি রোদে শুকানোর পরে কিসমিস তৈরি হয়। আর আঙ্গুর ঢুকানোর সময়ে বিভিন্ন পোকা ও মাছি আঙ্গুর উপর বসে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই কিসমিস না ধুয়ে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে।
- গল্পকালীন সময়ে কালো কিসমিস খেলে হজম শক্তি হ্রাস পেতে পারে যার ফলে ডায়রিয়া ও গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আঙ্গুর সতেজ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এবং এই আঙ্গুল দিয়ে যখন কিসমিস তৈরি করা হয় তখন কীটনাশক থেকে যায়। ফলে কর্মকালীন সময়ে কীটনাশক যুক্ত কিসমিস খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
- পরিমিত পরিমানে কিসমিস খান এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কিনা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কিনা তা আমরা অনেকেই জানিনা। কিসমিস
শরীরের জন্য ভীষণ স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। তবে আপনার যদি ডায়াবেটিস কিংবা
রক্তে শর্করা জাতীয় কোন সমস্যা থেকে থাকে তবে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের
জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তাদের বিশেষজ্ঞরা
চিনি জাতীয় যেকোনো খাবার না খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিসমিসে রয়েছে চিনি
জাতীয় উপাদান যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যা ডায়াবেটিসের
ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ১৫টি কার্যকারী উপকারিতা ও
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সেই সাথে প্রতিদিন কতটুকু
কিসমিস খাওয়া উচিত, গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিরাপদ কিনা, গর্ভাবস্থায়
কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয় সমূহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
নানাবিধ পুষ্টিগুণে ভরপুর কিসমিস খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী কিসমিস খাবেন। শুকনো ফলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ফল হল
কিসমিস। হালকা ক্ষুধার জন্য সহজ সমাধান হতে পারে কিসমিস। গর্ভাবস্থায় আপনি
যদি বাইরে যান তবে আপনি ব্যাগে মধ্যে ছোট একটি পাত্রে কিসমিস নিতে পারেন যা
আপনার প্রতিদিনে কাজে লাগবে।
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য আখরোটের উপকারিতা অনেক বেশি। তবে এর বাজার
মূল্যের কারণে সবার পক্ষে ক্রয় করা এবং নিয়মিত খাওয়া সম্ভব হয় না। তবে
সামর্থ্য অনুযায়ী যদি নিয়মিত কিসমিস খাওয়া যায় তবে তা গর্ভাবস্থায় মা ও
শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর
গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে নিয়মিত কিসমিস খান। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং
সুস্থ কর গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url