নিম পাতার ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে
আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে চুলকানিতে নিম পাতার
ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব।
নিম পাতার মধ্যে রয়েছে হাজারও গুনাগুন। তাই নিম পাতার ব্যবহার করে চুলকানিকে
জানান চিরবিদায়। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল থেকে নিম পাতার উপকারিতা ও
অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পোস্টের সূচিপত্রঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- নিম পাতার উপকারিতা
- নিম পাতার ব্যবহারবিধি
- নিম পাতার অপকারিতা
- চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
- চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহারের পদ্ধতি ও খাওয়ার নিয়ম
- নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি/ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা
- নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সকলেই জানি। নিম হল হাজারো ঔষধি
গুণাগুণ সম্পন্ন একটি গাছ। নিম ২১ শতকের এমন একটি বৃক্ষ যার শিকড় থেকে পাতা, ডাল, ফুল-ফল সব কিছুই ব্যবহারযোগ্য। ঔষধি কাজ হিসেবে এর ব্যবহার অত্যাধিক।
ভারত মহাদেশে নিমকে গ্রামের ঔষধালয় বলা হয় কারণ এতে রয়েছে অগণিত
স্বাস্থ্য সুবিধা।
অনেক দেশ আছে যেখানে এই গাছের সমস্ত অংশই বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার
করা হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা সেবন করলে আমাদের শরীরের ক্ষতিকর
উপাদান গুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। এছাড়াও আজকাল প্রসাধনী তৈরিতেও নিম
পাতার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া নিম গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত এবং এতে ঘুন ধরে
না।
কোন পোকা বাসা বাঁধতে পারে না বা উইপোকা ও খেতে পারে না। তাই আসবাবপত্র
তৈরিতে নিমের কাঠ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার অনেক উপকারিতা
রয়েছে যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক নিম পাতার ১৫টি কার্যকারী স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিম পাতার উপকারিতাঃ নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই ভালো কাজ করে।
- ভাইরাস প্রতিরোধ করেঃ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে নিম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কেননা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি লাভ করার আগে চিকেন পক্স, হাম, অন্যান্য চর্মরোগ এর জন্য নিমপাতা বেটে শরীরে লাগালে উপকার পাওয়া যেত। ভারত উপমহাদেশে ভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে বহু প্রাচীন কাল থেকেই।
- ওজন কমাতে নিম পাতার উপকারিতাঃ নিম ফুলের মধ্যে রয়েছে ওজন হ্রাস করার অসাধারণ সক্ষমতা। নিম শরীরের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে অতিরিক্ত চর্বি দূর করে বিশেষভাবে এটি তলপেটের চর্বি দুর করতে খুবই ভালো কাজ করে।
- চোখের চুলকানিতেঃ আমাদের অনেকের চোখেই চুলকানির সমস্যা রয়েছে। নিম হাজারো ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন এমন একটি উপাদান যা চোখের চুলকানি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- এলার্জি দূর করতে নিম পাতার উপকারিতাঃ বর্তমানে এলার্জি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। নিম পাতা ব্যবহার করে এলার্জি নিমিষেই দূর করা যায়।
- খুশকির সমস্যা দূর করেঃ খুশকি দূর করার ঔষধ গুলির মধ্যে নিমপাতা অন্যতম একটি উপাদান। নিমের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক নাশক উপাদান যা খুশকি দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে।
- ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধেঃ ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হলো নিমপাতা। নিমপাতা ব্যবহার করে সহজেই ম্যালেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম পাতার উপকারিতাঃ নিমপাতা আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রাকে কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুন ভাবে কাজ করে।
- উকুন দূর করেঃ আমাদের অনেকের মাথাতেই উকুনের সমস্যা রয়েছে। উকুনের সমস্যায় অতিষ্ট হয়ে আমরা বাজারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি। অথচ নিম পাতা ব্যবহারে সহজেই উকুন দূর করা যায়। এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও নিম অত্যন্ত কার্যকরী।
- দাঁতের রোগ নিরাময়ে নিম পাতার উপকারিতাঃ দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিম হতে পারে অন্যতম একটি কার্যকরী উপাদান।
- বাতের ব্যথা বা ভোলা ভাব নিরাময়েঃ বাতের ব্যথার বা ভোলা ভাবের ঔষধ হিসেবে নিম দারুণভাবে কাজ করে। নিম তেলের ম্যাসাজ করলে বাতের ব্যথা বা ফোলা ভাব দূর হয়।
- আলসার প্রতিরোধে নিম পাতার উপকারিতাঃ নিমের মধ্যে রয়েছে গ্যাস্ট্রোপ্রটেকটিভ ও আন্টিইউলেটর বৈশিষ্ট্য। যা আলসার প্রতিরোধে দারুন ভাবে কাজ করে।
- ক্যান্সার বা কর্কট রোগের জন্যঃ নিম পাতার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, করিসেটিন, বিটা ক্যারোটিন, কাইমাফেরোল, আজাডিরন ইত্যাদি। যা ক্যান্সার বা কর্কট রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করে।
- কৃমিনাশক হিসেবে নিম পাতার উপকারিতাঃ কৃমিনাশক হিসেবে নিম পাতার রস অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- কাটা বা পোড়া জায়গায়ঃ কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে নিম পাতার রস সেখানে লাগিয়ে রাখুন এতে দ্রুত উপকার পাবেন।
উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলোতে কিভাবে নিম পাতার ব্যবহার করবেন তার বিস্তারিত
আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হয়েছে।
নিম পাতার ব্যবহারবিধি
নিম পাতার ব্যবহার। নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? যেহেতু এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তাই আমাদের নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানা জরুরী। নিম গাছের সংস্কৃত নাম হল 'অরিস্ট'। যার মানে হল
সর্বরোগনাশিনী। যেকোনো জিনিস ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তার ব্যবহারবিধির
সম্পর্কে জানা জরুরি। তা না হলে উপকারের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি হয়। তাই
চলুন নিম পাতার ব্যবহার এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিম পাতার ব্যবহারঃ কয়েকটি নিমপাতা নিন এবং এ নিমপাতা গুলো গুড়ো করে নিয়ে এক গ্লাস পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এটি পান করলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
- ওজন কমাতে নিম পাতার ব্যবহারঃ এক মুঠো নিম ফুল নিয়ে সেটি গুঁড়ো করে নিন। এখন এর সাথে এক চামচ মধু এবং আধা চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। এটি শরীরের ওজন কমাতে দারুন ভাবে কাজ করে।
- বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতার ব্যবহারঃ বাতের ব্যথা দূর করার জন্য নিম পাতার তেল ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এটি বাতের ব্যথার ওষুধ হিসেবে কাজ করবে
- ভাইরাস প্রতিরোধ করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ একটি পাত্রে নিম পাতা নিন এবং পরিমাণ মতো পানি ঢেলে নিন। এখন এটি চুলায় গরম করুন এবং নিমপাতা পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এই নিম পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব এবং চুলকানি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ জুলাই একটি পাত্রে এক মুঠো নিম পাতা নিন এবং এতে ৪ কাপ পরিমাণ পানি ঢেলে দিন। এখন এটি সিদ্ধ করতে থাকুন যতক্ষণ না পানির রং সবুজ বর্ণের হয়। পানির রং সবুজ বর্ণ ধারণ করলে এটি চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই নিমপাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার এই নিমপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে চুল ধুলে অনেক ভালো উপকার পাবেন। এটি আপনার চুলের খুশকি দূর করবে এবং কন্ডিশনার এর মত কাজ করবে।
- এলার্জি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতা বেটে নিন এবং একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে শরীরে লাগালে এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
- চোখের চুলকানি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ চোখের চুলকানি দূর করতে নিমপাতা কে পানিতে সেদ্ধ করে নিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। নিমপাতার সিদ্ধ করা হয়ে গেলে এটিকে ঠান্ডা করে নিন। এখন এই পানি চোখে ঝাপটা দিলে আরাম পাওয়া যাবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ প্রতিদিন সকালে ৫টি গোলমরিচ এর সাথে দশটি নিমপাতা বেটে খেয়ে নিন। এটি আপনার শরীরের রক্তনালী কে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
- ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী নিম পাতার ব্যবহারঃ নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে নিয়ে ঠান্ডা করে নিন এবং এই নিমপাতা সেদ্ধ পানি একটি স্প্রে বোতলে ঢেলে নিন। প্রতিদিন এটি ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব্য কমবে এবং ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পাবে।
- উকুন দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ মাথায় উকুনের সমস্যা দূর করার জন্য নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে নিন এবং ২০-৩০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন এবং শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাতে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার দুই মাস ব্যবহার করলে উকুনের সমস্যা দূর হবে।
- দাঁতের রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিম পাতার ব্যবহারঃ নিমের পাতা বা নিম গাছের ছাল অথবা বাকলের গুঁড়া বা ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজুন। এটি দাঁতের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করবে এবং দাঁত মজবুত করবে।
- পোকা মাকড়ের ব্যথা দূর করতে নিম পাতার ব্যবহারঃ পোকামাকড় কামড় দিলে সেই জায়গায় নিম পাতা বেটে লাগিয়ে রাখুন। নিম গাছের মূলের ছাল বেটেও লাগাতে পারেন। পেটের ব্যথা অনেকটা উপশম হবে। তবে লক্ষণীয় যে, কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
নিম পাতার অপকারিতা
নিম পাতার বহুবিধ উপকার থাকলেও নিম পাতার অপকারিতা রয়েছে। নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা যেহেতু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। তাই আমাদের এর উপকারিতার পাশাপাশি নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। চলুন এখন
জেনে নেয়া যাক নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।
- গর্ভাবস্থায় জটিলতা তৈরি করতে পারেঃ আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকলে বা যদি সম্ভাবনা থাকে গর্ভবতী হওয়ার তাহলে নিমপাতা বা নিম গাছের যে কোন কিছু এড়িয়ে চলুন। কেননা এটি গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের ভ্রুনকে নষ্ট করে দেয়ার সক্ষমতা রাখে বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই যথাসম্ভব গর্ভবতী অবস্থায় নিম পাতা ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন।
- অহেতুক ক্লান্তির কারণ হতে পারেঃ আপনারা যারা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যান বা শরীর দুর্বল থাকে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, তাদের মিমের তৈরি যেকোনো কিছু সেবন করা ঠিক না। কেননা নিমের তৈরি উপকরণ ব্যবহারে এই ধরনের অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বন্ধ্যাত্বের কারণঃ নিমের ব্যবহার অনেক সময় বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।আপনার যদি নিম পাতা খাওয়ার পর বমি বমি ভাব মাথা ব্যথার ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিন।
- আপনাদের যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের নিম পাতা খাওয়া উচিত নয়।
- যেকোনো অপারেশনের ২ সপ্তাহ পূর্বে থেকে নিম এর ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
- কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের সরাসরি নিমপাতা ত্বকে ব্যবহার করলে জ্বালাপোড়া বা এলার্জি সমস্যা হয়। তাই যাদের এরকম সমস্যা রয়েছে তারা নিম পাতা ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন।
- খালি পেটে বেশিদিন নিমপাতা না খাওয়াই ভালো।
- নিম পাতার রস বেশি পরিমাণে খেলে পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর।
- ছোট বাচ্চাদের নিম তেলের ব্যবহার বা নিম পাতা খাওয়া একদমই ঠিক নয়।
- আপনার শরীরের জন্য কয়টি নিম পাতা কতদিন ধরে সেবন করা যেতে পারে তা একজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে তারপর সেবন করবেন। এর ক্ষতিকর দিক অতটাও তীব্র নয় তবুও আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ঔষধিগুণ সম্পন্ন
গাছের কথা চিন্তা করলেই আমাদের সবার আগে নিম গাছের কথা মাথায় আসে। কারণ
এটি এমন একটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন গাছ যার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সকল উপাদান
রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। নিম গাছকে অনেকে ম্যাজিক গাছ ও বলে
থাকেন।
চুলকানি দূর করার জন্য আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি এমনকি অনেক
গাছ-গাছারার ব্যবহার করি। চুলকানি দূর করার জন্য অন্যতম একটি গাছ হল নিমগাছ। নিম গাছের পাতা ব্যবহার করে সহজেই চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চুলকানিতে আক্রান্তের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। যখন শরীরে চুলকানি উঠে তখন সেই
জায়গায় আমরা অনেক বেশি চুলকিয়ে থাকি। কিন্তু পরবর্তীতে সেসব
জায়গার অবস্থা অনেক বাজে হয়ে যায়।
এমনকি সেখানে ক্ষত বা ঘায়ের সৃষ্টি হয়। শরীরে চুলকানি হলে ত্বকের মধ্যে
অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর চুলকানি কতটা অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার তা
কেবলমাত্র যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারাই বোঝে। যাদের চুলকানি রয়েছে তারা
চাইলেই অনেক সময়ই নিজেদের পছন্দের খাবারগুলো খেতে পারেনা। কেননা অনেক খাবার
হয়েছে যেগুলো খেলে চুলকানির সমস্যা অনেকটা বেড়ে যায়।
যার কারনে চুলকানি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাদের
খাবারের উপর যথেষ্ট বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয়। আমরা অনেক সময় চুলকানিতে
বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকি কিন্তু তারপরও কোন উপকার পাই না। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা
মতে নিম পাতা ব্যবহার করে সহজে চুলকানি দূর করা যাবে। তাই চুলকানিতে নিম
পাতার ব্যবহার অনেকটা কার্যকরী।
চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহারের পদ্ধতি ও খাওয়ার নিয়ম
চুলকানিতে নিমপাতা ব্যবহারের পদ্ধতি ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আলোচনা
করব। এতক্ষণ আমরা চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
যেকোনো কিছু থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই তার ব্যবহারের
পদ্ধতি বা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখা প্রয়োজন। তাই চলুন
চুলকানিতে নিম পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি ও খাওয়ার নিয়ম দেখে নেয়া যাক
- কয়েকটি নিমপাতা নিন এবং এগুলা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এখন এই পাতাগুলো সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন অথবা পাটাই বেটে এর পেস্ট তৈরি করতে পারেন।
- এখন এই তৈরিকৃত পেস্ট শরীরের চুলকানির জায়গাগুলোতে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- ভালো ফলাফল পাবার জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।
- এছাড়াও চুলায় একটি পাত্রে এক মুঠো পরিমাণ নিম পাতা নিন এবং এর মধ্যে এক কাপ পরিমাণ পানি ঢেলে দিন। এখন এই নিমপাতা পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ফোটানো হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে দিন। নিম পাতা ফুটানো পানি ঠান্ডা হয়ে আসলে একটি ছাকনি দিয়ে পাতাগুলো থেকে পানি গুলো আলাদা করুন এবং নিম পাতাগুলো ফেলে দিন।
- এখন এই পানি কোন তুলা বা কটনের সাহায্যে চুলকানির জায়গায় হালকা করে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- চুলকানি দূর করতে নিমপাতা কে পানিতে সেদ্ধ করে নিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। নিমপাতা ফুটানো হয়ে গেলে এটিকে ঠান্ডা করে নিন এবং পাতাগুলো ছেঁকে আলাদা করে পাতা এবং পানি আলাদা করুন। এখন গোসলের পানির সঙ্গে এই পানি দিয়ে গোসল করুন। এভাবে চুলকানিতে নিমপাতার ব্যবহার করে সকল প্রকার চুলকানি এবং ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
আশা করি চুলকানিতে নিম পাতার সঠিক ব্যবহার কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে বুঝতে
পেরেছেন।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি/ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে ক্ষতি হবে?
উত্তরঃ নিম পাতার অসংখ্য উপকার রয়েছে। তবে এর সামান্য কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। আপনার যদি লিভার অথবা কিডনির
সমস্যা থেকে থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে প্রতিদিন নিম পাতা খাবেন
না। আবার যদি ত্বকে নিমপাতা ব্যবহার করে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় তবে
তৎক্ষণাৎ এটি বন্ধ করে দিন এবং ত্বকে নিম পাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত
থাকুন।
প্রশ্নঃ নিম পাতার রস খেলে কি ওজন কমে?
উত্তরঃ ওজন কমাতে নিম পাতার বা নিম ফুলের
উপকারিতা রয়েছে। নিম ফুলের মধ্যে রয়েছে ওজন হ্রাস করার অসাধারণ সক্ষমতা।
নিম শরীরের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে অতিরিক্ত চর্বি দূর করে বিশেষভাবে এটি
তলপেটের চর্বি দুর করতে খুবই ভালো কাজ করে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কতটুকু নিম পাতা খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ দৈনিক ৪ থেকে ৫টি নিম পাতা খেতে
পারেন। যদি নিমের রস খেতে চান তবে দৈনিক ২ থেকে ৪ চা চামচ দিনে দুইবার করে
খেতে পারেন। নিম ক্যাপসুল দিনে ২বার এক থেকে দুই ক্যাপসুল খাওয়া যেতে
পারে।
প্রশ্নঃ নিম খেলে কি ফুসকুড়ি ভালো হয়?
উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে দেখা
গেছে, নিমের তেল ব্যবহারে ত্বকের মধ্যে লালভাব বা ফোলাভাব কমাতে অনেকটা
কার্যকরী। এটি ব্যবহারে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে এবং ত্বক শিথিল করতেও
অনেকটা সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ নিম তেল মুখে লাগানো যাবে কি?
উত্তরঃ নিম তেলের মধ্যে রয়েছে ক্লিনজিং
বৈশিষ্ট্য। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুবই ভালো। এটি ত্বকের কালো দাগ, পিগমেন্টেশন এবং যেকোনো ধরনের লাল দাগ দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার বিধি
সম্পর্কে আলোচনা করেছি। সেই সাথে চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার এবং
চুলকানিতে নিম পাতা ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি এবং খাওয়ার নিয়ম নিয়ে
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি।
উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বুঝতেই পারছেন নিম পাতা স্বাস্থ্যকর গঠনের জন্য কি
পরিমানে উপকারিতা রয়েছে। তাই আমাদের সকলের উচিত যদি সম্ভব হয় প্রত্যেকের
বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে নিমগাছ লাগানো। কেননা নিম হচ্ছে সকল রোগের মহা ঔষধ।
আপনার বাড়িতে যদি নিম গাছ থাকে তাহলে এটি শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদে
রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও আপনার বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ ঠান্ডা এবং দূষণমুক্ত রাখতে নিম গাছের
ঝুড়ি মেলা ভার। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে টানা ৩০দিন এর বেশি নিমপাতা সেবন
করা উচিত নয়। তাই নিমপাতার সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে
সেবন করবেন। নিম পাতা খালি পেটে খাওয়াই ভালো।
তবে আপনার যদি খেতে তিতো লাগে বা কোন সমস্যা হয় তাহলে এটি পানির সাথে বা মিষ্টি জাতীয় যে কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে
খেতে পারেন। অথবা সকালে বা বিকালে চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এভাবে
খেলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন। সুতরাং নিম পাতার পরিমিত ব্যবহার করুন এবং শরীর ও
স্বাস্থ্য ভালো রাখুন।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url