ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক-জানুন কি বলেছে বিশেষজ্ঞরা?

ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত আছেন? নিয়মিত এই ডিম খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের উপর কি প্রভাব পড়ছে, পুষ্টিগুণের ঘাটতি এবং কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি সে সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন।
ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক - জানুন কি বলেছে বিশেষজ্ঞরা?
আপনি কি আপনার খাদ্য তালিকায় ব্রয়লার মুরগির ডিম যুক্ত করতে আগ্রহী ? আজকের আলোচনা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি এবং ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানার। সচেতন হয়ে সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিকগুলো ও সতর্কতা

ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক

ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক। ব্রয়লার মুরগী হল এমন একটি বিশেষ প্রজাতির মুরগি যা অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয় ও বেশি মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও ব্রয়লার মুরগির ডিম অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য কিন্তু এগুলো খাওয়ার ফলে হতে পারে অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। যেগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরী। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলো যা আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে-
    • হৃদরোগের ঝুঁকিঃ ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলোর একটি হল হৃদরোগের ঝুঁকি। ব্রয়লার মুরগির ডিম রয়েছে উচ্চ কোলেস্টেরল যা আপনার হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে রক্তের কোলেস্ট্রলের মাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় যা হৃদরোগে ঝুঁকি বাড়াতে সক্ষম। তাই আপনারা যারা হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্রয়লারের ডিম খাওয়া অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
    • হরমনের প্রভাবঃ ব্রয়লার মুরগি খামারে তাড়াতাড়ি বড় করার জন্য বিভিন্ন হরমোন ব্যবহৃত হয়। এই হরমোন গুলো ডিমের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে যা শরীরের স্বাভাবিক হরমোন ব্যালেন্স কে বাধার সম্মুখীন করতে পারে। এর ফলে আপনার বিভিন্ন হরমোন জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    • খাদ্য নিরাপত্তাঃ ব্রয়লার মুরগির ডিম উৎপাদনের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা তেমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা থাকে না। ব্যাকটেরিয়া যা খাদ্য বাহিত রোগের কারণ হিসেবে পরিচিত। এই কারণে অসাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে বয়লার মুরগি ডিম উৎপাদিত হয় এবং এই ডিম খেলে খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীরে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
    • অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহারঃ ব্রয়লার মুরগির খামারে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এসব অ্যান্টিবায়োটিক সমূহ ডিমের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এর ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
    • কোলেস্টেরলের উচ্চতাঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমের অন্যতম একটি ক্ষতিকর দিক হলো উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল। ব্রয়লার মুরগী ডিমে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে। যা হৃদরোগ স্ট্রোক এবং অন্যান্য অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
    • মেদঃ ব্রয়লার মুরগী ডিম রয়েছে উচ্চ ক্যালরি ও ফ্যাট যা অতিরিক্ত ওজনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত এই ডিম খান তাহলে আপনার শরীরে চর্বি জমতে পারে যা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন টাইপ২ ডাইবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
    • ফুড পয়জনিংঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমের সালমোনিলা বা অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া যদি কোন ভাবে আপনার শরীরে প্রবেশ করে তাহলে খাদ্য বাহিত বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। যার লক্ষণগুলো হচ্ছে  ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা বা বমি বমি ভাব।
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ ব্রয়লার মুরগি খামারে বেড়ে ওঠে এবং ব্রয়লার মুরগি খামারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক এবং এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
    • এলার্জিজনিত সমস্যাঃ এলার্জিজনিত সমস্যা ব্রয়লার মুরগির ডিমের অন্যতম একটি ক্ষতিকর দিক। ব্রয়লার মুরগির ডিমের কিছু বিশেষ ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায় যা কিছু কিছু মানুষের জন্য এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এলার্জিগুলো চুলকানি, র‍্যাশ, গলা অথবা মুখ ফুলে যাওয়া, বমি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
    • পুষ্টির ঘাটতিঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমে যে পুষ্টি রয়েছে তার তুলনায় দেশি মুরগির ডিমের অনেক গুণ বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিনারেল ও ওমেগা-৩ ফ্যাটের ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতির ফলে আপনারা যারা নিয়মিত ব্রয়লার মুরগী ডিম খেয়ে থাকেন তারা পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবেন না, এর ফলে আপনাদের শরীরে ঘাটতি নানা ধরনের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিবে এবং দীর্ঘমেয়াদী পুষ্টিহীনতার কারণে শরীরের রোগ বাসা বাধতে পারে।

ব্রয়লার মুরগি ডিম চেনার উপায়

ব্রয়লার মুরগি ডিম চেনার উপায়। এতক্ষণ আমরা ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক জেনেছি। ব্রয়লার মুরগি ডিম সহজলভ্য হলেও এগুলা চেনা এবং সঠিকভাবে নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্রয়লার মুরগী ডিম সঠিকভাবে চেনা বা নির্বাচন করা আমাদের জন্য নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে অনেক বেশি সহায়তা করে থাকে। 

তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার সহজ উপায়গুলো সম্পর্কে । ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার জন্য নিজের কিছু উপায় বিবেচনা করে দেখতে পারেন-
    • ডিমের খোসার রংঃ ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার জন্য ডিমের খোসার রং এর দিকে খেয়াল করুন। ব্রয়লার মুরগির ডিমের খোসার রং সাধারণত সাদা অথবা হালকা ব্রাউন কালার হয়ে থাকে। যদিও খোসার রং খাদ্যের গুণগত মান নির্দেশ করে থাকে না, তবে সাদা পালক ডিমের অধিকাংশই ব্রয়লার মুরগির থেকে আসে। আপনি যদি অস্বাভাবিক কোন রঙের যেমন ডার্ক বাদামি বা উজ্জ্বল রং দেখেন তাহলে সেগুলো সাধারণত দেশি হয়ে থাকে।
    • ডিমের পৃষ্ঠঃ ব্রয়লার মুরগির পিষ্ঠ উজ্জল এবং চকচকে ধারণের। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগির ডিমের খোসায় কোন রকম ফাটল বা দাগ না থাকলেই ভালো হয়। কোন দাগ বা যদি ফাটল থাকে অথবা ক্ষত থাকলে সেগুলো সমস্যা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে।
    • ডিমের আকার ও আকৃতিঃ আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিমের আকার আকৃতি দেখেও ডিম নির্বাচন করতে পারেন। ব্রয়লার মুরগির ডিমের আকার সাধারণত মাঝারি থেকে বড় ধরনের হয়ে থাকে। ডিমের আকৃতি গোলাকার বা কিছুটা আয়তাকার হয়। খুবই বড় অথবা খুবই ছোট ধরনের ডিম ব্রয়লার মুরগি ডিম হবে না।
জল পরীক্ষার পদ্ধতিঃ ব্রয়লার মুরগির ডিম তাজা বা ভালো কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য জল পরীক্ষার পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য একটি পাত্রে পানি নিন এবং সেখানে ডিমটি রাখুন-
    • আপনি যদি দেখেন ডিমটি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে তবে তা তাজা ডিম।
    • যদি ডিমটা কিছুটা ভেসে থাকে তো সম্ভবত অনেক আগের ডিম তবে এটি খাবার উপযোগী রয়েছে।
    • আর আপনি যদি দেখেন তিনটি সম্পূর্ণভাবে পানির উপর ভেসে রয়েছে তবে তা পচে গেছে এবং ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।

ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ

ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ। ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক ও উপকারিতা। যেহেতু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তাই আমাদের জানা জরুরী ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। ব্রয়লার মুরগির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ গুলো। ব্রয়লার মুরগির ডিমের মধ্যে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন কাজকর্ম করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। 
ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ
ব্রয়লার মুরগির ডিম একটি সহজলভ্য এবং অনেক বেশি পুষ্টিকর খাবার। নিচে ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
    • প্রোটিনঃ প্রত্যেকটা ব্রয়লার মুরগির ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন। প্রোটিন আমাদের শরীরের পেশি গঠনে এবং টিস্যু মেরামত করতে সহায়তা করে। এই প্রোটিনের কারণে ডিম আমাদের শরীরের শক্তি সরবরাহ করার পাশাপাশি মস্তিষ্কে উন্নত করতে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
    • ভিটামিন বি কমপ্লেক্সঃ ব্রয়লার মুরগির রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষ করে বি২, বি৬, বি১২ যা আমাদের শরীরের মেটাবলিজম উন্নতি ঘটায়। এছাড়াও ভিটামিন বি-১২ আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি করতে অনেক বেশি কার্যকরী।
    • ভিটামিন এঃ ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রাতকানা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এছাড়া ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
    • ভিটামিন ডিঃ ব্রয়লার মুরগির ডিম একটি ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস। আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করে আমাদের শরীরকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে।
    • ভিটামিন ইঃ ডিমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন ই আমাদের ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
    • কোলিনঃ বয়লার মুরগী ডিমের অন্যতম একটি পুষ্টিগুণ হচ্ছে এতে রয়েছে কলিন এর মত উপাদান। এই ডিমে থাকা কোলিন আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে অনেক বেশি কার্যকরী।
    • আইরনঃ ডিমে আয়রন বা লোহা থাকে। যা আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রক্তস্বল্পতা দূর করবে এবং শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
    • জিংকঃ ব্রয়লার মুরগি ডিম রয়েছে জিংক যা ক্ষত নিরাময়ের সহায়ক। এছাড়াও জিংক আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোন উৎপাদনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
    • সেলেনিয়ামঃ ডিমের মধ্যে রয়েছে সেলিনিয়াম নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও সেলিনিয়াম আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক বেশি সহায়ক। এছাড়াও সেলেনিয়াম থাইরয়েডের হরমোন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অনেক বেশি কার্যকরী।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের পুষ্টি তালিকা (প্রতি ১টি মাঝারি আকারের ডিমের)

    • ক্যালোরিঃ ৬০-৭০ক্যালরি
    • আমিষঃ ১২%
    • প্রোটিনঃ ৬-৭গ্রাম
    • কোলিনঃ ১০০-১৪০ মি. গ্রাম
    • ফ্যাটঃ ৫-৬গ্রাম
    • ভিটামিন এঃ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৬%
    • ভিটামিন ডিঃ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৫-১০%
    • ভিটামিন বি-১২ঃ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৯-১০%
    • ফোলেটঃ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৫-৬%
    • সেলিনিয়ামঃ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ২০-২৫%

ব্রয়লার মুরগি ডিমের উপকারিতা

ব্রয়লার মুরগি ডিমের উপকারিতা। এতক্ষণ আমরা ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক, ব্রয়লার মুরগি ডিম চেনার উপায় এবং ব্রয়লার মুরগি ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ব্রয়লার মুরগির ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও ব্রয়লার মুরগির ডিমের কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। যদিও ব্রয়লার মুরগির ডিম খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। 

তবে সঠিকভাবে আপনি যদি গ্রহণ করেন তবে এর  উপকারিতা বেশি পাওয়া যাবে। তাই সচেতনভাবে সুষম খাদ্যাভাসে একটি অংশ হিসেবে ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতে পারেন। নিচে ব্রয়লার মুরগি ডিমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো-
  • ওজন কমাতে সহায়কঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমে ক্যালরির মাত্রা কম থাকে। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেশি সহায়ক হতে পারে। ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে তা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আপনারা যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের খাদ্য তালিকায় ব্রয়লার মুরগির ডিম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এটা আপনার ওজন কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
  • মস্তিষ্কের উন্নতিঃ কোলিন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান যা ডিমের মধ্যে উপস্থিত থাকে। এটি আপনার স্মৃতিশক্তি মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে অনেক বেশি সহায়তা করবে। এছাড়াও যারা গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন তাদের জন্য কলিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। কেননা এটি ভ্রুনের মস্তিষ্কের বিকাশে যথেষ্ট কার্যকরী।
  • চোখের জন্য উপকারীঃ ব্রয়লার মুরগি ডিমের মধ্যে রয়েছে দুটি এন্টি অক্সিডেন্ট। যা আপনার চোখের জন্য অনেক বেশি উপকারী হতে পারে। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো চোখের ছানি প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি সহায়ক। তাই আপনি যদি নিয়মিত ডিম খান তাহলে আপনার চোখে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবেন।
  • ভিটামিন ডি এর উৎসঃ ব্রয়লার মুরগির ডিমের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি হলো এটি ভিটামিন ডি এর চমৎকার একটি উৎস। আমাদের শরীরের জন্য হাড়ের তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। হারকে মজবুত রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • হার্টের স্বাস্থ্যঃ আমরা জানি ডিমের মধ্যে অনেক বেশি কোলেস্টেরল থাকে। তবে সাম্প্রতিক অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না বরং এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। ডিমের মধ্যে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হয়েছে তা আমাদের শরীরে জন্য ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে। যা আমাদের শরীরে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারঃ বয়লার মুরগি ডিমে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। যেমনঃ ভিটামিন এ, আমাদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদন করে এবং সেলিনিয়াম একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
  • অ্যানিমিয়া প্রতিরোধের সহায়কঃ ব্রয়লার মুরগি ডিমে রয়েছে আইরন। যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। হিমোগ্লোবিনের কাজ হচ্ছে আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং রক্তস্বল্পতাকে দূর করে বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। তাই আপনি যদি নিয়মিত ডিম খান তবে রক্তের লোহার ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
  • ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ ডিমে রয়েছে , প্রোটিন ভিটামিন বি এবং বায়োটিন স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অনেক বেশি কার্যকর। বায়োটিনের কাজ হচ্ছে চুলের বৃদ্ধি করা এবং চুল পরা প্রতিরোধ করা। এছাড়াও ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন রয়েছে তা আমাদের ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ ডিম কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত এবং এতে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে যা ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বেশ কার্যকরী।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়কঃ ব্রয়লার মুরগী ডিমে থাকা ভিটামিন বি আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদন করে থাকে। ফলে দৈনন্দিন সকল কাজকর্মে শরীর অনেক চাঙ্গা থাকে এবং ক্লান্তি অনুভব কম হয়।
  • হাড় মজবুত করেঃ ব্রয়লার মুরগি ডিমের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি হল হাড়ের মজবুত এর জন্য অনেক বেশি উপকারী। ব্রয়লার মুরগির ডিমে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে থাকে বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রয়লার মুরগির ডিমের এই উপকারিতা গুলো শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে তবে সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করাও জরুরী।

ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা বেশি

ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি সে সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই অবগত নয়। বাজারে আমরা সাধারণত দুই ধরনের ডিম দেখতে পাই লাল এবং সাদা। অনেক সময় অনেকে মনে করেন লাল ডিমে পুষ্টি অনেক বেশি থাকে সাদা ডিমের তুলনায়। আবার অনেকেই সাদা ডিমকে বেশি  স্বাস্থ্যকর বলে ভাবেন। কিন্তু আসলে সত্যিটা কি? 

ব্রয়লারের মুরগির লাল ডিম এবং সাদা ডিমের মধ্যে পুষ্টিগুণের কোন বৈষম্য আছে কিনা? ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা বেশি সে বিষয়ে এখন আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব

ডিমের রং কিসের উপর নির্ভর করে?

লাল রং এবং সাদা রঙের ডিমের প্রধান কারণ হলো মুরগির জাত। এটি একটি জেনেটিকালি বৈশিষ্ট্য যা ডিমের পুষ্টি বা স্বাস্থ্যের উপর এর উপর কোন রকম প্রভাব ফেলে না। পুষ্টিগত দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে উভয় প্রকারের ডিমই সমান।
    • পুষ্টিগত উপাদানঃ লাল এবং সাদা ডিমের প্রায় একই রকম। যেমন প্রোটিন ভিটামিন এবং খনিজ চর্বি এবং কোলেস্টেরল ইত্যাদি।

লাল ডিম বনাম সাদা ডিম কোনটি সবচেয়ে ভালো?

    • স্বাদ ও মানঃ অনেকে মনে করে থাকেন লাল ডিম সাদা ডিমের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু। যদিও স্বাদে তেমন কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। তবে ডিমের মান মুরগির খাদ্যাভাস এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে থাকে।
    • পুষ্টিগুণঃ ব্রয়লার মুরগির লাল ও সাদা ডিমের পুষ্টিগুণের মধ্যে কোনরকম পার্থক্যের নেই বললেই চলে। উভয় ডিমই প্রোটিন, ভিটামিন মিনারেল এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে।
    • খোসার পুরুত্বঃ লাল ডিমের খোসা সাধারণ হয়ে থাকে। এটি ডিমের পুষ্টির উপর প্রভাব ফেলে না তবে সংরক্ষণ করার কিছুটা সুবিধা হয়।
    • মূল্যঃ লাল ডিম সাধারণত সাদা ডিমের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। এটি লাল মুরগি পালনের খরচের উপর নির্ভর করে থাকে। অনেকেই মনে করেন দাম বেশি মানে পুষ্টিগুনো হয়তো বেশি থাকে। কিন্তু লাল ও সাদা ডিমের পুষ্টির মধ্যে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকে না।
যদি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেন তাহলে লাল এবং সাদা ডিমের মধ্যে তেমন বড় কোন পার্থক্য নেই। তাই আপনি যেটি খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন এবং যেটি সহজলভ্য সেটি খেতে পারেন। আপনি যদি সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য খেতে চান তবে মুরগির জাত বা ডিমের রঙের চেয়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুরগির খাদ্য এবং পালন পদ্ধতি দেখা। 

তাই ডিম কিনতে গেলে শুধু রং দেখে কিনবেন না বরং ডিমের উৎপত্তিস্থল কোথায় ও পালনের পদ্ধতি কিরূপ সবকিছু বিবেচনা করে যেটা উত্তম মনে হবে সেই ডিম কিনবেন। পরিশেষে ডিম হোক লাল বা সাদা তা পুষ্টির আধার, যা আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আশা করি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা বেশি।

ব্রয়লার মুরগির ডিমে কি এলার্জি আছে

ব্রয়লার মুরগির ডিমে কি এলার্জি আছে? ব্রয়লার মুরগির ডিম হোক বা যেকোনো মুরগির ডিম হোক না কেন, কিছু মানুষের জন্য সেটা এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই এলার্জি জনিতো সমস্যা শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বয়স যত বৃদ্ধি পায় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যালার্জি জনিত সমস্যা সম্পূর্ণভাবে চলে যায়-

চলুন ব্রয়লার মুরগির ডিমের এলার্জির কারণ গুলো দেখে নিয়ে যাক-
ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন থাকে সেটাই মূলত অ্যালার্জির জন্য দায়ী। ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন ইমিউন সিস্টেমের জন্য প্রধান বাধা। যদিও ডিমের কুসুমেও কিছু প্রোটিন থাকে যা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে কুসুমের তুলনায় সাদা অংশে এলার্জির হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ব্রয়লার মুরগির ডিমের এলার্জির লক্ষণ সমূহঃ
ব্রয়লার মুরগির ডিম থেকে যে এলার্জি সৃষ্টি হয় তার লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা থেকে তীব্র হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ডিম খাবার পর অর্থাৎ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় এর মধ্যে রয়েছে-
    • চুলকানির রেস বা একজিমা জনিত ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    • অনেক সময় পেটের বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা বমি ইত্যাদি।
    • শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি বা হাচির সম্ভাবনা থাকে।
    • এনাপাইলাক্সিস এমন একটি গুরুতর সমস্যা যার কারণে জীবনঘাতি পর্যন্ত হতে পারে। এতে শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপের পতন এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
এলার্জি জনিত সমস্যায় কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে?
  • শিশুরাঃ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের মধ্যে ডিমের এলার্জির হার বেশি। তবে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স যত বৃদ্ধি পায় এলার্জি তত কমতে থাকে।
  • অন্য এলার্জি জনিত সমস্যা থাকা ব্যক্তিরাঃ আপনাদের মধ্যে যাদের অন্য খাদ্য বা পরিবেশগত এলার্জি রয়েছে তাদের মধ্যে ডিমের এলার্জি জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
  • যদি ডিমের এলার্জিজনিত লক্ষণ দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের বা কোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন এবং যতটা সম্ভব ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি

কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি আমাদের অনেকের অজানা। ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক গুলোর জন্য আপনি যদি বয়লার মুরগি ডিম এড়িয়ে চলেন তাহলে ব্রয়লার মুরগির ডিমের বিকল্প হিসেবে কোন মুরগির ডিমের পুষ্টি বেশি সে সম্পর্কে আপনার অবগত থাকতে হবে। ডিম মূলত আমরা কমবেশি সবাই খেয়ে থাকি তাই আমাদের জানা উচিত কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি থাকে। 

ডিম আমাদের জীবনের অন্যতম পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। যাতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজের মতো চমৎকার উৎস। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মুরগির ডিম কিনতে পাওয়া যায় যেমনঃ দেশি মুরগির ডিম, ব্রয়লার মুরগী ডিম, ফার্মের ডিম এবং অর্গানিক মুরগির ডিম। 
কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোন মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি থাকে বা সবচেয়ে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়? চলুন বিশ্লেষণ করে দেখা যাক কোন ডিম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী হতে পারে-
    • দেশি মুরগির ডিমঃ দেশি মুরগিগুলো সাধারণত খোলা পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং প্রাকৃতিক যেসব খাদ্য যেমনঃ পোকামাকড়, ঘাস, ছোট গাছের পাতা ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। এর ফলে তাদের ডিমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে এবং প্রাকৃতিক খাদ্যাভাস কারণে এসব ডিম থেকে বেশি পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।
    • ব্রয়লার মুরগির ডিমঃ ব্রয়লার মুরগির ডিম গুলো সাধারণত ফার্মে উৎপাদিত হয়ে থাকে। যেখানে মুরগিগুলোকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে রাখা হয় এবং তারা ফিড বা খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে। যা পুষ্টি সমৃদ্ধ হলেও প্রাকৃতিক খাদ্যের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ হয় না।
    • পেস্টচারাইজড মুরগির ডিমঃ মুরগিরা খোলা মাঠের মধ্যে ঘাস গাছের পাতা প্রাকৃতিক খাবার পোকামাকড় খেয়ে বেড়ে ওঠে। তারা সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন-পালন হয় এবং খুব কমই কৃত্রিম খাদ্য পাই।
    • অর্গানিক মুরগির ডিমঃ অর্গানিক ডিম উৎপাদিত হয় সেইসব মুরগি থেকে যাদেরকে কোন ধরনের কৃত্রিম হরমোন, এন্টিবায়োটিক বা খাদ্য খাওয়ানো হয় না। এই মুরগিরা প্রাকৃতিক খাদ্য খায় এবং খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়াই।
    • ফার্মের ডিমঃ ফার্মের মুরগিগুলো নিয়ন্ত্রিত খাদ্য এবং পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং তাদের খাদ্যাভাসে বিশেষ উপাদান যোগ করা হয়ে থাকে। যাতে ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি পায়।
কোন মুরগির ডিম সবচেয়ে পুষ্টিকর?
সাধারণভাবে সব ধরনের ডিমই পুষ্টির উৎস। তবে দেশি মুরগির ডিম গুলোকে সবচেয়ে পুষ্টিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা এর প্রাকৃতিক খাদ্যাভাস এবং খোলা পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এ কারণে ডিমে  ভিটামিন ওমেগা-৩ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এছাড়াও অর্গানিক এবং পেস্টচারাইজড যে মুরগির ডিম গুলো রয়েছে এগুলো খুবই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। 

তবে আপনারা যে ধরনের ডিম খান না কেন ডিমের পুষ্টিগুণ আপনার খাদ্যাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যা শারীরিক সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে আশা করছি ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক এবং কোন মুরগির ডিমে পুষ্টি বেশি সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

ব্রয়লার মুরগির ডিমে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও তার ক্ষতিকর প্রভাব

ব্রয়লার মুরগির ডিমে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও তার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা তো ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জেনেছি এবং কোন মুরগির ডিম সবচেয়ে পুষ্টিকর নিয়েও আলোচনা করেছি। চলুন তাহলে এখন আমরা ব্রয়লার মুরগির ডিমের অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ও তার থেকে হওয়া ক্ষতিকর প্রভাব এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবো।

অ্যান্টিবায়োটিক কেন ব্যবহার করা হয়?
ব্রয়লার মুরগি যেহেতু খামারে বড় হয় এবং এগুলো দ্রুত বৃদ্ধি হয় এবং তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্রয়লার মুরগীরা অনেক ধরনের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই তাদের সুস্থ রাখার জন্য এবং উৎপাদনশীলতা যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। 

যদি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তাহলে মুরগি অনেক তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং কম সময়ে অনেক বেশি ডিম দেয়। যা খামারীদের জন্য অনেক লাভজনক হয়। কিন্তু এটি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তাই আমাদের সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাঅ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে একটা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকটময় পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে।
    • এন্টিবায়োটিক যুক্ত ডিম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ জীবাণু প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
    • অ্যান্টিবায়োটিক ডিম খেলে মানুষের শরীরের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে এলার্জি, ইমিউন সিস্টেমে দুর্বলতা, পেটের সমস্যা ইত্যাদি।
    • এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার মুরগির হরমোনাল ভারসাম্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যা ডিমের অনুমান এবং এর পুষ্টি উপাদানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
    • মানব শরীরের জন্যও কিছু কিছু হরমোন জনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
    • কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এন্টিবায়োটিক যুক্ত খাদ্য শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন অঙ্গের কার্যক্ষমতা বাধা সৃষ্টি করে।

ব্রয়লার মুরগি ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে আমরা ব্রয়লার মুরগির ডিমের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা শুরু করে, ব্রয়লার মুরগী ডিমের উপকারিতা, ব্রয়লার মুরগির ডিম চেনার উপায়, ব্রয়লার মুরগী ডিমের পুষ্টিগুণ এবং ব্রয়লারের লাল ডিম নাকি সাদা ডিমের উপকারিতা সবথেকে বেশি,সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও কোন মুরগির ডিমের পুষ্টি বেশি তা নিয়েও বিস্তারিতভাবে তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

সব কিছুরই উপকারী এবং ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্রয়লার মুরগির ডিম পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার হতে পারে, যদি আপনি এন্টিবায়োটিক মুক্ত বা অর্গানিক ডিম বেছে নিতে পারেন। আর যদি আপনি ব্রয়লার মুরগির ডিম খেতে চান তবে আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে এটি পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় ব্রয়লার মুরগির ডিম যুক্ত করুন এবং এর পুষ্টিগুণের যত উপকারিতা আছে তা উপভোগ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url