চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক-স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিপদ জানুন এখনই
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আমাদের দেশে সকল
সবজির মধ্যে খুবই পরিচিত অন্যতম একটি সবজি হচ্ছে চাল কুমড়া। চাল কুমড়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা কি সে সম্পর্কেও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
চাল কুমড়াকে ব্রেইন ফুড বলা হয়। এছাড়াও কিডনি রোগের মহা ঔষধ বলা হয় চাল
কুমড়াকে। এই ব্রেইন ফুড খাবার চাল কুমড়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কিভাবে উপকারী
ও কতটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে আজকের আর্টিকেলে সে সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি। ঘরের চালে চাল কুমড়া মাচানে ঝুলে আছে
পোস্ট সূচিপত্রঃ চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
চাল কুমড়ার উপকারিতা
চাল কুমড়ার উপকারিতা ব্যাপক। চাল কুমড়ো হলো একটি পুষ্টিকর সবজি যা মূলত দক্ষিণ
ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বহুল পরিচিত। এটি বিভিন্নভাবে রান্নার জন্য ব্যবহার করা
হয়ে থাকে এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু চাল কুমড়োই নয় এর কচি পাতা ও ডগার শাক হিসেবেও
খাওয়া যেতে পারে।
চাল কুমড়ো অত্যন্ত সহজলভ্য এবং বহুমুখী
একটি সবজি যা আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে এর বিভিন্ন উপকারিতা পাবেন। চলুন তাহলে চাল কুমড়ার উপকারিতা গুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক-
শরীরকে শীতল রাখেঃ আমাদের শরীরের সব সময় প্রশান্তি বজায় রাখতে হবে। কেননা আমাদের
শরীর যদি প্রশান্তিতে না থাকে তাহলে সকোল কাজ বিরক্ত লাগবে মেজাজ খিটখিটে থাকবে
এবং কোন কথা ভালো লাগবে না ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হবে। চাল কুমড়ো মানসিক চাপ কমাতে
সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে শীতল রাখবে যা মানসিক প্রশান্তি দিবে। চাল কুমড়ো
শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা রাখে যা গরম আবহাওয়ায় বিশেষ ভাবে উপকারী।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ চাল কুমড়ার উপকারিতার অন্যতম একটি হচ্ছে এটি ওজন
নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী। চাল কুমড়াতে জলীয় উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে এবং
ক্যালোরি কম থাকায় এটি ওজন কমাতে অনেক বেশি সহায়ক হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ চাল কুমড়াতে থাকে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে সকল ধরনের
অসুখ থেকে দূরে রাখবে।
শক্তি বাড়াতে চাল কুমড়ার উপকারিতাঃ গরমকালীন সময়ে আমাদের শরীর অনেক বেশি ঘামে
এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়। যা আমাদের শরীরের এনার্জিকে দ্রুতই কমিয়ে
দেয়। এইসব সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে আপনার ঘরে থাকা চাল কুমড়া। চাল কুমড়ার
মধ্যে থাকে ভিটামিন বি৩। যা শরীরের শক্তি বাড়াতে অনেক বেশি কার্যকরী। তাই আপনার
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করবেন চাল কুমড়ো আশা করি ভালো উপকার পাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ চাল কুমড়ায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। যা রক্তের
শর্করের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
কাজ করে। এছাড়াও চাল কুমড়া পেটের সকল ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করে। চাল কুমড়ার
হালুয়া বা মোরব্বা বানিয়ে খেলেও ডায়াবেটিস দূর হবে।
হজম শক্তি উন্নত করেঃ আপনারা যারা হজমের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তাদের জন্য
চাল কুমড়া হতে পারে একটি অনন্য খাবার। ফাইবার সমৃদ্ধ চাল কুমড়ো আপনার হজম শক্তি
বাড়াবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য
করবে এই চাল কুমড়ো।
ত্বকের জন্য উপকারীঃ যৌবন ধরে রাখে চাল কুমড়া। চাল কুমড়োতে থাকা ভিটামিন এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে এবং ত্বকের বয়স জনিত
ক্ষতি কমায়। এটি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং বার্ধক্যের প্রভাব কমায়। চুল ও ত্বকের যত্নে নিয়মিত চাল কুমড়া রস ব্যবহার করলে চুল হবে ঝলমলে এবং ত্বক উজ্জ্বল
হবে।
আলসার সারাতে কাজ করেঃ সাধারণত যারা আলসারের সমস্যায় আক্রান্ত হয় সে সকল
ব্যক্তিদের বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। এই সমস্যা থেকে
বেরোতে নিয়মিত খেতে পারেন চাল কুমড়া। প্রতিদিন যদি নিয়ম করে চাল কুমড়া খান
এটি আপনার পেটের আলসার দ্রুত সারাতে সাহায্য করবে এবং আপনি অনেক স্বস্তি পাবেন।
হৃদযন্ত্রের জন্য ভালোঃ চাল কুমড়াতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
কাজ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও এটি শরীরকে পুষ্টি প্রদান করে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করে।
ফুসফুস ভালো রাখতে চাল কুমড়াঃ মানবদেহের ফুসফুস ভালো রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনারা যারা দীর্ঘদিন থেকে এজমা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছেন
চাল কুমড়া হতে পারে একটি অত্যন্ত কার্যকরী খাবার। চাল কুমড়ার মধ্যে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ফুসফুসের মধ্যে জমে থাকা কফ বা বিভিন্ন ধরনের দূষিত
পদার্থ শরীর থেকে বের করে এবং শরীর সুস্থ রাখবে।
এক নজরে চাল কুমড়োর সকল পুষ্টিগুণ সমূহ
চাল কুমড়া পুষ্টিগুণ এর কথা বলে শেষ করা যাবে না। চাল কুমড়াতে রয়েছে অসংখ্য
পুষ্টিগুণ। অনেক সবজি রয়েছে যেগুলো বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না তার মধ্যে
অন্যতম একটি সবজি হল এই চাল কুমড়ো। চাল কুমড়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন অনেক
বেশি উপকারী তেমনি চাল কুমড়ার পাতাতেও রয়েছে অনেক বেশি ভিটামিন।
তাছাড়াও চাল
কুমড়ার বিচিতে পাওয়া যায় বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। চাল কুমড়ার বীজ সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায় এবং
সকলের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবার। চাল কুমড়ার মধ্যে ভেষজ ঔষধি গুন অনেক বেশি
থাকে। প্রতি 100 গ্রাম চালকুমড়া তে থাকা পুষ্টি উপাদানের তালিকা নিচে দেয়া হল। যা থেকে
আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন চালকুমড়া আমাদের শরীরের পক্ষে কতটা উপকারী-
জলীয় উপাদানঃ ৯৬%
শক্তি ক্যালরিঃ ১৩ ক্যালরি
প্রোটিনঃ ০.৪ গ্রাম
শর্করাঃ ৩ গ্রাম
চর্বিঃ ০.২ গ্রাম
ফাইবারঃ ০.৬ গ্রাম
ভিটামিনসমূহ-
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন এ
খনিজ উপাদান-
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
এছাড়াও রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট-
- ফ্ল্যাবনয়েড ও ফ্রেন্ডলিগ যৌগ
- এন্ড ডি ইনফ্লামেটরি উপাদান
গর্ভাবস্থায় চাল কুমড়া খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় চাল কুমড়া খেলে কি হয় চলুন জেনে নেয়া যাক। গর্ভাবস্থায় চাল
কুমড়ো অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। কারণ এটি গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা প্রদান করবে। নিচে গর্ভাবস্থায় চাল কুমড়ার
উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হলো-
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করবে চাল কুমড়া। চাল কুমড়ায় ৯৬% জলীয় উপাদান রয়েছে যা
শরীরকে হাইড্রেটেট রাখে। যা গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভকালীন
সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে অনেক বেশি পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়াও চাল কুমড়ায়
থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ গর্ভাবস্থায় শরীরের ফোলা ভাব এবং প্রদাহ কমাতে
অনেক বেশি সাহায্য করে।
চাল কুমড়ার তরকারি মুখের রুচি বাড়ায় পিপাসা দূর করে ।
গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে চাল কুমড়া। যা গর্ভ অবস্থায় মায়ের
জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চাল কুমড়াতে থাকা ভিটামিন বি৬ স্নায়ুতন্ত্রের
বিকাশে সাহায্য করে। শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও চাল কুমড়াতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন
মজবুত করবে। চাল কুমড়াতে থাকা ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান গর্ভস্থ শিশুর শরীরের
কোষ গঠনে এবং বিকাশে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক সুস্থতার
পাশাপাশি প্রয়োজন মানসিক সুস্থতা। শুধু আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখলে চলবে না
মানসিকভাবেও অনেক বেশি সুস্থ ও ভালো থাকতে হবে। আপনার ঘরেই থাকা চাল কুমড়া
আপনাকে দিতে পারে সেই মানসিক প্রশান্তি। চাল কুমড়ো খেলে মস্তিষ্ক শীতল থাকবে
মানসিক চাপ কমবে যা গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চাল কুমড়ার রস/জুস খাওয়ার নিয়ম
চাল কুমড়ার জুস খাওয়ার নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে। চাল কুমড়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা জানার পাশাপাশি আমাদের চাল কুমড়ার জুস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে
হবে। কিন্তু সঠিক নিয়মে কিভাবে এটি খাবেন সেজন্য এখন জানিয়ে দিব চাল কুমড়ার
জুস রেসিপি-
- প্রথমত একটি চাল কুমড়া নিতে হবে। তারপর সেই চাল কুমড়াটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অতঃপর চাল কুমড়াটিকে একটি ছুরি বা বটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে বাটিতে রাখতে হবে। চাল কুমড়ার মধ্যে থাকা বিচিগুলো ফেলে দেয়ায় ভালো।
- এখন একটি পাত্রে সেই টুকরো টুকরো করে কাটা চাল কুমড়া রেখে তার সাথে দুই থেকে তিনটা লেবু কেটে নিয়ে বিটনুন কিংবা লবণ দিয়ে একসাথে মেশাতে হবে। এই সকল উপাদান একসাথে ব্লেন্ড করার পর ছেঁকে নিন। অতঃপর রেডি হয়ে যাবে সেই চাল কুমড়ার রেসিপি। যা আপনি একটি পরিষ্কার গ্লাসে ঢেলে খেতে পারেন।
চাল কুমড়ার জুসের উপকারিতা এবং চাল কুমড়ার রেসিপি সম্পর্কে তো জানলে। এই চাল
কুমড়ার রস বা জুস কোন রোগের জন্য কিভাবে খাবেন চলুন এখন তা দেখে নেয়া যাক-
- জন্ডিসের সমস্যায়ঃ চাল কুমড়া জন্ডিসের জন্য মহাঔষধ হিসেবে ড়ারকাজ করে বলা চলে। চাল কুমড়া আপনি টুকরো টুকরো করে কেটে রৌদ্র শুকিয়ে যদি বড়ি খান অথবা চাল কুমড়ার তরকারিও খেতে পারেন এতে জন্ডিস দ্রুত ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মৃগী রোগের সমস্যায়ঃ চাল কুমড়ার মোরব্বা বানিয়ে খেলে মাথা ঘোরা, মাথা অনেক বেশি গরম হওয়া এছাড়াও মৃগী রোগ সমস্যা সেরে যায়। চাল কুমড়া আপনার ঘুমের সমস্যা দূর করবে ঘুম ভালো হবে।
- ডায়াবেটিস সমস্যায় চাল কুমড়ার রসঃ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। চাল কুমড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হতে পারে অনেক বেশি উপকারী। তাই আপনার যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে চাল কুমড়ার মোরব্বা, হালুয়া অথবা তরকারি খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।
- হৃদরোগঃ হৃদরোগে ভোগা রোগীদের চাল কুমড়ার হালুয়া বানিয়ে যদি নিয়মিত খাওয়ানো যায় তবে অনেক ভালো উপকার পাবে। এই জন্য হালুয়াতে গরুর দুধের থেকে ছাগলের দুধ দিয়ে বানালে বেশি কার্যকরী হবে বলে আশা করছি।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়ঃ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সমস্যা দূর করার জন্য চাল কুমড়ার জুস নিয়মিত ৪-৫ চামচ করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর সমস্যা দূর হবে এবং প্রস্রাব ক্লিয়ার হতে সাহায্য করবে।
- শরীর শক্তি বাড়াতেঃ আমরা অনেক বেশি পরিশ্রম করলে শরীরের ক্লান্তি অনুভব হয়। শরীরের শক্তি যোগানোর জন্য চাল কুমড়ার শাষ শুকিয়ে নিয়ে সেটাকে চূর্ণ করে দুই থেকে তিন চামচ মধু তার সাথে মিশিয়ে খেলে শরীর পুষ্ঠ হবে। এছাড়াও চাল কুমড়ার শ্বাস ঘি দিয়ে ভেজে নিয়ে সেটা চিনি মিশ্রিত করে নাড়ু বানিয়ে আপনি যদি নিয়মিত খান তাহলেও শরীরের এনার্জি দ্রুত বৃদ্ধি করবে এবং আপনার শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেশি কার্যকরী হবে।
- যক্ষা রোগের সমস্যায়ঃ যক্ষা রোগের সমস্যাই চাল কুমড়া খুবই উপকারী একটি খাবার। যক্ষা রোগের যখন প্রাথমিক লক্ষণ গুলো দেখা দেবে তখন আপনি চাল কুমড়ার রস ৩-৪ চামচ তার সাথে অল্প একটু চিনি ও দুধ মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে খেতে পারেন যা যক্ষা রোগের জন্য অনেক ভালো কাজ করবে বলে আশা করছি।
- রক্তপিত্ত অনেক ব্যক্তির মাঝে দেখা দেয় কাশি দেয়ার সময় হঠাৎ করেই গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি রক্তপিত্ত রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। কারো যদি রক্তপিত্ত সমস্যা থাকে তাহলে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। চাল কুমড়ার রস বা জুস বানিয়ে ৩-৪ চামচ মধু দিয়ে মিশিয়ে খেলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে বলে আশা করছি। সাথে বাসক গাছের পাতা রস মিশিয়ে নিলে বেশি উপকারিতা পাবেন।
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক। চাল কুমড়ার উপকারিতা ব্যাপক। তবে চাল কুমড়ার ক্ষতিকর
দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। যতই চাল কুমড়ার উপকারিতা থাকুক না কেন এর সঠিক
ব্যবহার না জানলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যগত অবস্থা
অনুযায়ী এটি খাওয়া উচিত। এখন আমরা চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানব।
চাল কুমড়া বেশি পরিমাণে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। চাল
কুমড়া সাধারণত একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে পরিচিত। তবে এটি খাবার
ফলে কিছু মানুষের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে চাল
কুমড়ার সম্ভাব্য কিছু ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-
- এলার্জি বা সংবেদনশীলতাঃ চাল কুমড়া পাওয়ার পর কিছু মানুষের শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন চুলকানি, ত্বকের লালভাব বা ফুশকুড়ি ইত্যাদি। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট বা গলা চুলকাতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন থেকে খাদ্য এলার্জিতে ভুগছেন।
- অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রভাবঃ চাল কুমড়া ঠান্ডা প্রভাবযুক্ত এক ধরনের খাদ্য। যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতকালে অথবা ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে (যেমন সর্দি কাশি সাইনোসাইটিস) তাদের জন্য এটি খাওয়া বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- হজম জনিত সমস্যা হতে পারেঃ যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চাল কুমড়া খান তবে পেট ফাঁপা, ডায়েরিয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যাদের হজম শক্তি বেশি দুর্বল তারা এটি খাওয়া থেকে এরিয়ে চলতে পারেন।
- অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকিঃ চাল কুমড়া আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করেন তাহলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে শরীরে ক্লান্তি দুর্বলতা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- টক্সিক প্রভাব( বিষাক্ত রসের সমস্যা)ঃ কিছু সময় চাল কুমড়ার রস বিষাক্ত হতে পারে, বিশেষত যদি এটি পরিপক্ক বা দূষিত অবস্থায় থাকে সে ক্ষেত্রে। বিষাক্ত রস খাওয়ার ফলে বমি, মাথা ঘোরা বা শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
কিছু সতর্কতা ও সুপারিশ-
- চাল কুমড়া সবসময় পরিমাণমতো এবং পাকা অবস্থায় খাওয়া উচিত।
- যারা এলার্জি বা ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগেছেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি না খাওয়াই ভালো হবে।
- নতুন করে চাল কুমড়া খাওয়া শুরু করার আগে তা অল্প পরিমাণে সেবন করে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও পরীক্ষা করে নিলে ভালো হবে। এতে সাবধানতা মেনে চলতে পারবেন এবং ঝুঁকির সম্ভাবনা এড়িয়ে চলা যাবে।
চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি
চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি আমাদের অনেকের অজানা। আমাদের দেশীয়
ঐতিহ্যবাহী যে সকল খাবার রয়েছে সেগুলো এখন আর ডাইনিং টেবিলে দেখা যায় না বললেই
চলে। তেমনি একটি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি জাতীয় খাবার হল চাল কুমড়ার মোরব্বা।
চাল কুমড়ার মোরব্বা সুস্বাদু ও জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। সাধারণত এটি চাল কুমড়া বা
সাদা কুমড়া দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে।
চাল কুমড়ার মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি সহজ, তবে কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন আছে। চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো
ইতিমধ্যে জেনেছি। নিচে চাল কুমড়ার মোরব্বা তৈরি করতে সহজ রেসিপি দেয়া হলো-
উপকরণ
চাল কুমড়াঃ ১-২টি চাল কুমড়া ( কিউব আকারে কাটা বীজও খোসা ছাড়ানো)
চিনিঃ ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ( স্বাদ অনুযায়ী )
পানিঃ ২-৩ কাপ
চুনঃ ১ টেবিল চামচ ( পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে )
এলাচ গুঁড়োঃ ১ চা চামচ
লেবুর রসঃ ১ টেবিল চামচ
কেওড়া জলঃ ১ চা চামচ ( ঐচ্ছিক )
প্রস্তুত প্রণালী-
চাল কুমড়া প্রস্তুত করা- চাল কুমড়া ছোট ছোট করে টুকরা করে নিন। তারপর ১ টেবিল চামচ চুন
মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা কুমড়ার টুকরাগুলো ভিজিয়ে রেখে দিন। এতে করে কুমড়া গুলো শক্ত
হবে এবং মোরব্বা তৈরির সময় আকৃতি ঠিক থাকবে। নির্ধারিত সময় পর টুকরাগুলো
ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন।
চিনির সেরা তৈরি- একটি বড় পাত্র নিয়ে এতে ২-৩ কাপ পানি ও চিনি দিয়ে শিরা তৈরি করুন। চিনি
সম্পূর্ণ গলে গেলে লেবুর রস এতে মিশিয়ে দিন। (লেবুর রস মূলত শিরা থেকে ময়লা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়) শিরা থেকে ময়লা বা থানা উঠলে তা চামচ দিয়ে সরিয়ে
ফেলুন।
কুমড়া রান্না করা- কুমড়ার টুকরাগুলো শিরার মধ্যে দিয়ে দিন। এখন চুলার আঁচ মাঝারি রেখে কুমড়ার
টুকরা গুলো নরম ও স্বচ্ছ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে থাকুন। এটি প্রায় ৩০-৪০
মিনিট সময় নেবে। রান্নার শেষ দিকে এলাচ গুড়ো এবং কেওড়া জল দিয়ে দিন। এগুলো মোরব্বা তৈরিতে সুগন্ধ ও বিশেষ স্বাদ যোগ করবে। সেরা যখন ঘন হয়ে আসবে তখন চুলা থেকে
নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
সংরক্ষণঃ মোরব্বা ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিষ্কার কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন। এটি
দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
কিছু পরামর্শঃ
মোরব্বা তৈরির জন্য চাল কুমড়া পরিপক্ক হতে হবে। চুন ব্যবহার না করতে চাইলে এই ধাপ এরিয়ে যেতে পারেন। তবে এতে কুমড়া একটু নরম হতে পারে। পরিবেশনের সময় মোরব্বা এক টুকরো খেজুর বা বাদামের সঙ্গে পরিবেশন করলে দেখতে আকর্ষণীয় ভাবে এবং খেতেও মজা লাগবে। এই রেসিপি সুস্বাদু এবং দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ যোগ্য হবে বলে আশা করছি।
চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ চাল কুমড়াতে কি এলার্জি আছে ?
উত্তরঃ চাল কুমড়াতে এলার্জি খুব বিরল। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এতে থাকা
প্রোটিন ও লেটেস্টের মত উপাদান এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষণগুলোর
মধ্যে চুলকানি ফোলাভাব হাচি বা শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। যদি সন্দেহ হয় তবে
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ চাল কুমড়ার জুস খেলে কি ওজন কমে ?
উত্তরঃ হ্যাঁ চাল কুমড়ার জুস ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এতে ক্যালোরি কম থাকে
এবং ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে। এটি হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘক্ষন পেট ভরা রাখে এবং
শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। তবে এটি পরিমিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভাসের সঙ্গে গ্রহণ
করা উচিত।
প্রশ্নঃ চাল কুমড়ার বিচি খেলে কি ?
উত্তরঃ চাল কুমড়ার বিচি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি হ্রদস্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ইমিউন
সিস্টেম শক্তিশালী হয়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, পরিপাকতন্ত্র উন্নতি করে
ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কতটুকু কুমড়ার বিজ খাওয়া উচিত ?
উত্তরঃ প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ ( প্রায় ১৫-৩০ গ্রাম) কুমড়ার বীজ হওয়া
স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। এটি পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালরি
পাওয়াতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য কুমড়ার বীজ কিভাবে খাবেন?
উত্তরঃ শুক্রাণু বৃদ্ধির জন্য কুমড়ার বীজ প্রতিদিন এক মুঠো অর্থাৎ (প্রায়
২০-৩০ গ্রাম) খেতে পারেন। এছাড়াও কাঁচা বীজ খেতে পারেন বা সেগুলো ভেজে নিয়ে ও খেতে পারেন। তবে যদি নিয়মিত খান তাহলে শুক্রাণুর গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্নঃ চুল গজাতে কুমড়ার বীজ কিভাবে খাবেন?
উত্তরঃ চুল গজানোর জন্য কুমড়ার বীজ উপকারিতা পেতে প্রতিদিন এক মুঠো অর্থাৎ
(প্রায় ২০-৩০ গ্রাম) খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন
চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কাঁচা বা রোস্ট করা কুমড়ার
বীজ খাওয়া যেতে পারে।
চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে চাল কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় চাল কুমড়া খেলে
কি হয়, চাল কুমড়ার ক্ষতিকর দিক, চাল কুমড়ার রস খাওয়ার নিয়ম, চাল কুমড়ার
মোরব্বা বানানোর পদ্ধতি, চাল কুমড়ার পুষ্টিগুণ, চাল কুমড়ার বিচি খেলে হয় বা
চালকুমড়ার বিচির উপকারিতা, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
চাল কুমড়া শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সারা বছরই চালকুমড়া পাওয়া যায়। ৯০
দশকের আগের মানুষ চাল কুমড়ার গাছ ঘরের আশেপাশে রোপন করতো। ঘরের চালেই হতো এই চাল
কুমড়ার সবজি। কিন্তু এখনকার সময় চাল কুমড়া শুধু চালেই নয় মাচা বা মাটিতেও চাষ
করা হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা এবং খাদ্যাভাস অনুযায়ী চিকিৎসকের
পরামর্শ গ্রহণ করে চাল কুমড়া খাওয়া সর্বোত্তম।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url