চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারে চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন সহজেই

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার, কালোকেশরী গাছের উপকারিতা, এবং এর ঔষধি গুনাগুন ব্যাপক। আপনি কি অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন? চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি নতুন চুল গজানোর জন্য এবং চুল লম্বা করতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন? এজন্য কালোকেশী হতে পারে একটি জনপ্রিয় ভেষজ উপাদান যা অতীত কাল থেকেই চুলের বিভিন্ন যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে।
চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার
আপনি যদি চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন তাহলে খুব সহজে ও অল্প সময়ের মধ্যে আপনিও পাবেন এক ঢাল লম্বা চুল। এর সাথে চলুন কালোকেশী তেল তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই। এছাড়াও আরো জানাবো কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়। উদ্ভিদ

পোস্ট সূচীপত্রঃ চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার-কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়

কেশরাজ/কালোকেশী পাতার গুনাগুন

কেশরাজ/কালোকেশী পাতার গুনাগুন সম্পর্কে কি জানেন? কেশরাজ বা কালোকেশী পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Eclipta prostrata. এটি একটি ঔষধি গাছ যা বিশেষ করে চুলের যত্নে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একে অনেকে ভৃঙ্গরাজ নামেও চেনে। এটি আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। 

প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা ও সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা কালোকেশী পাতা আপনি যদি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে দেহ ও চুল উভয়ের জন্যই ভীষণ উপকারিতা বয়ে আনবে। কেশরাজ বা কালোকেশী পাতার পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এতে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ, ও উপকারী যৌগ যা চুলের পাশাপাশি সমানভাবে শরীরের জন্য উপকারী। 

নিচে কালোকেশী পাতার পুষ্টি উপাদানের একটি সম্ভাব্য তালিকা দেয়া হলো ( প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা পাতার ভিত্তিতে)
    • শক্তিঃ ৩৫-৪৫ কিলোক্যালরি
    • কার্বোহাইড্রেটঃ ৬-৮ গ্রাম
    • প্রোটিনঃ ৩.৫-৫.০ গ্রাম
    • ক্যালসিয়ামঃ ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম
    • আইরনঃ ২০-৪০ মিলিগ্রাম
    • পটাশিয়ামঃ ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম
    • ফসফরাসঃ ৫০-৭০ মিলিগ্রাম।
    • ম্যাগনেসিয়ামঃ ৩০-৬০১ মিলিগ্রাম
    • ভিটামিন এঃ ৫০০০-৭০০০
    • ভিটামিন সিঃ ২০-৩০ মিলিগ্রাম
    • ভিটামিন ইঃ অল্প পরিমাণে
    • বিটা ক্যারোটিনঃ উচ্চমাত্রায়
    • এন্টি অক্সিডেন্টঃ প্রচুর
এ সকল উপাদান গুলোর কারণে কালোকেশী বা কেশরাজ পাতা শুধু চুলের জন্যই নয় বরং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্যও ভীষণভাবে উপকারী। বিশেষ করে যকৃত ত্বক এবং রক্ত পরিশোধনে। 

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর পদ্ধতি

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার এর পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক ও দেশীয় চিকিৎসায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য নানা ঘরোয়া টোটকা আমরা কমবেশি কাজে লাগিয়ে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। এটি চুল পড়া রোধ করে চুল ঘন ও কালো করা খুশকি দূরীকরণ এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকর। 

আপনি হয়তো প্রচণ্ড রকমের চুল পড়ায় সমস্যায় ভুগছেন এবং এর থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট শ্যাম্পু তেল ব্যবহার করছেন কিন্তু কোন উপকারিতা পাচ্ছেন না? অথচ আপনার হাতের কাছেই রয়েছে এর জাদুকরী সমাধান। চুলের যত্নে কালোকেশী হতে পারে একটি জাদুকরি ভেষজ উপাদান। যা নতুন করে আজ আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি বরং চুলের ভালোর জন্যই সেই আদিকাল থেকেই আমাদের মা দাদীদের এই পাতা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। 

আপনি যদি আপনার চুলের প্রতি বিশেষ যত্নশীল না হন তাহলে অকালে টাক হয়ে যেতে পারে আপনার মাথা যা আপনার সৌন্দর্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। কেননা আপনি নারী হোন অথবা পুরুষ আপনার সৌন্দর্যের অন্যতম রহস্য হলো মাথা ভর্তি চুল। এ কারণে আপনি হয়তো ডাক্তারের কাছেও যান কিন্তু কোনই ফল পাচ্ছেন না। তাই সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনি একবার চুলের যত্নে কালকেশী ব্যবহার করুন এবং এর ম্যাজিক দেখুন। 
কালোকেশরী গাছের উপকারিতা
কালোকেশী একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা সাধারণত তেল প্যাক অথবা চুলের হেয়ার মাক্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নিচে কালোকেশী ব্যবহারের কয়েকটি পদ্ধতি দেয়া হলো-

কালোকেশী তেলঃ কালোকেশী এক ধরনের ঘাস যা বিভিন্ন ধান খেতে বা জলভূমিতে জন্ম নেয়। চুলের সকল সমস্যা দূর করে এই কালোকেশী তেল। সঠিক উপায়ে কালোকেশী তেল তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করব---

কালোকেশী তেল ব্যবহারের পদ্ধতিঃ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রাতে মাথার ত্বকে ভালোভাবে মেসেজ করে লাগিয়ে রাখুন। অন্তত ১ ঘন্টা রেখে অথবা সারা রাত রেখে দিন এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আশা করছি অল্প কিছু দিনের ভেতরেই তফাৎ দেখতে পাবেন।

কালোকেশী হেয়ারমাক্সঃ কালোকেশী পাতার হেয়ারমাক্স ব্যবহার করলে চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে ভীষণভাবে কাজ করে। তাজা কালোকেশী পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং সবগুলো পাতা ব্লেন্ড করুন। আপনি চাইলে একটা আমলকি, কিছু মেথি, কারি পাতা এবং জবা ফুল সাথে যোগ করতে পারেন। চাইলে টক দই ও মেশাতে পারেন। সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে ব্লেন্ড করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এতেই মাথা ঠান্ডা হবে, চুল পড়া কমবে এবং চুল কালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কালোকেশী হেয়ারমাক্স ব্যবহারের পদ্ধতিঃ এই পেস্ট চুলের গোড়ায় ও সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি এবং হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকি দূর করতে, মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং চুল পড়া কমাতে দারুন উপকারি হবে। এটি সপ্তাতে ১ থেকে ২ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।

কালোকেশী রস খাওয়া(ভেতর থেকে উপকার পেতে)ঃ সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ কালোকেশী পাতার রস পান করা যেতে পারেন। আপনি যদি এটি সরাসরি খেতে না পারেন তাহলে এর সঙ্গে সামান্য কিছু পানি মিশিয়ে খেতে পারেন। সপ্তাতে ৩ থেকে ৪ দিন খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়। কালোকেশী পাতার রস খেলে যকৃত পরিষ্কার থাকবে রক্ত বিশুদ্ধ হবে হরমনের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা পরোক্ষ ভাবে চুলের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

বাজারজাত পণ্যঃ আপনার যদি প্রয়োজনীয় সময় এবং উপকরণ না থাকে তাহলে আপনি কালোকেশী তেল, শ্যাম্পু বা ক্যাপসুল কিনে ব্যবহার করতে পারেন তবে খাঁটি ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড নির্বাচন করায় ভালো।

চুলের যত্নে কালকেশী তেলের উপকারিতা

চুলের যত্নে কালকেশী তেলের উপকারিতা ব্যাপক। চুলের যত্নে কালোকেশী তেল একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক সমাধান। এটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু শতাব্দি ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বর্তমানে অনেকেই একে চুলের টনিক হিসেবে বিবেচনা করেন। লম্বা চুল প্রতিটি নারীর স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ এবং প্রতিদিনের ব্যস্ততার জন্য আমাদের চুলের যত্ন নেয়ার সময় থাকে না। 

যার ফলে চুল ঝরে পড়ে এবং চুল লম্বা হয় না। তবে সামান্য হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনে চললেই পাবেন কোমর ছাপানো লম্বা চুল। যা কালোকেশী তেল ব্যবহার করে পেতে পারেন। তাই চলেন চুলের যত্নে কালোকেশী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

প্রাকৃতিক উপাদান হাওয়ায় নিরাপদঃ তেলের উপকারিতার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

চুল পড়া কমায়ঃ কালোকেশী তেল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা চুলের ফলিকলকে পুষ্টি যোগায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আইরন চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। আপনি যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকেন তাহলে আপনার চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি এই ঘরোয়া পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়াও এই তেল মাথায় লাগিয়ে মালিশ করলে মাথা ঠান্ডা হবে  এবং আপনি মানসিক শান্তি অনুভব করবেন।

চুল ঘন ও লম্বা করেঃ কালোকেশী তেল চুল ঘন করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করে। যা চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ভালো করে কালোকেশী তেল চুলে মালিশ করুন এতে ভালো ফলাফল পাবেন। এর প্রাকৃতিক উপাদান চুলের ড্যামেজ ছাড়িয়ে চুল মোটা ও ঘন করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুলে প্রাকৃতিক কালো রং ধরে রাখতে সাহায্য করে কালোকেশিঃ কালোকেশীতে ও হরিটাকি এবং জাটা মানসি নামক দুইটা উপাদান থাকে যার ফলে চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী এই উদ্ভিদ। কালকেশী প্রাকৃতিকভাবে চুলের রং গাড়ো করে এবং পাকা চুলের হার কমায়। এটি বিটা ক্যারোটির ও আয়রন সমৃদ্ধ যা চুলে কালো ভাব আনতে সাহায্য করে। চুলে কালোকেশী পাতার রস ব্যবহার ধূসর চুল কালো করতে বেশ কার্যকরী।

খুশকি ও স্কেলপের ইনফেকশন কমায়ঃ কালোকেশী তেলে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা মাথার ত্বকের ফাঙ্গাস, খুশকি ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের শান্তি এনে দেয় এবং চুলের রুক্ষ শুষ্ক ভাব কমায়। এছাড়াও আপনার স্কেল্প এ যদি ইনফেকশন হয় তাহলে প্রচুর পরিমাণে চুল ঝরে পড়তে পারে। এতে করে স্কেলপে চুলকানির সমস্যা ও বাড়তে পারে। তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি কালোকেশী বা ভৃঙ্গরাজ তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ড্রাই স্কেলপে সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।

চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনেঃ নিয়মিত ব্যবহারে চুলে কোমলতা ও প্রাকৃতিক চকচকে ভাব আসে। এতে থাকা ভিটামিন ই ও প্রাকৃতিক তেল চুলের আদ্রতা ধরে রাখে। মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় এই তেল মালিশ করলে হেয়ার ফলিকল কে পুষ্টি যোগান দেবে এবং চুল মজবুত করতে সাহায্য করবে।

মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখেঃ মানসিক চাপ বা টেনশন জনিত চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। কালোকেশী তেল ঘুমানোর আগে রাতে ম্যাসাজ করলে ঘুম ভালো হয়।

চুলের অকালপক্কতা রোধঃ অল্প বয়সেই আমাদের অনেকের বিভিন্ন কারণবশত চুল পেকে যায়। একটা সময় পর আপনার চুলে পাক ধরবেই কিন্তু সময়ের আগে যদি আপনার চুল পেকে যায় তখন তা কোন ভাবেই স্বাভাবিক নয়। তাই চুলের অকালপক্ষতা রোধ করার জন্য এই কালোকেশী তেল ব্যবহার করে উপকারিতা পেতে পারেন।

আগা ফাটা প্রতিরোধ করেঃ চুলে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আদ্রতা যোগায়। ফলে আগা ফাটা বন্ধ হয় এবং চুল ভাঙ্গা কমে। 

উকুননাশকঃ আপনি যদি অতিরিক্ত উকুনের সমস্যায় ভুগেন তাহলে কালোকেশী বা কেশরাজের পাতার রস স্কেলপে লাগান। এরপরে একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড় ব্যবহার করে মাথায় পেচিয়ে রাখুন। এটি লাগানোর প্রায় এক ঘন্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে আপনি সপ্তাতে অন্তত ২বার এটি ব্যবহার করতে পারেন। আশা করছি এক মাসের মধ্যেই চুল হবে উকুনমুক্ত।

দ্রুত ফল পাওয়া যায়ঃ আমি নিজেই কালোকেশী ব্যবহার করার মাধ্যমে দ্রুত ফল পেয়েছি এবং আমার চুলের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। আমি যখন প্রথমে কালকেশী ব্যবহার শুরু করি তখন খুবই একটা আশাবাদী ছিলাম না। কিন্তু ১ মাসের মধ্যেই আমি আমার চুলের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। চুলের রক্ষতা কমেছে, চুল পড়া বন্ধ হয়েছে এর সাথে চুল ঘন কালো এবং লম্বা হতে সাহায্য করেছে এই কালোকেশী। আমার চুলের যত্নে অন্যতম প্রিয় একটি উপাদান হয়ে উঠেছে এই ঔষধি গুন সম্পূর্ণ উদ্ভিদটি। তাই আপনি চাইলেও এই কালোকেশী ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেন খুব সহজেই।

কালোকেশী তেল তৈরি করার নিয়ম

কালোকেশী তেল তৈরি করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের শরীরের অন্যতম সৌন্দর্যের অংশ হলো চুল। আর এই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তাই আজকে আপনাদের সাথে একটি যাদুকরি তেলে রেসিপি শেয়ার করব যা চুল পড়া কমাতে এবং চুল লম্বা ঘন ও কালো করতে ম্যাজিক এর মত কাজ করবে। 
  • কালোকেশী তেল তৈরি করার পদ্ধতিঃ কালোকেশে তেল তৈরি করার নিয়ম ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই করা যায় এবং এটি চুলের যত্নে অসাধারণ কার্যকর। নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে একটি ঘরোয়া প্রাকৃতিক কালো কেসের তেল তৈরি করার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
  • পাতা ধোয়া ও প্রস্তুত করাঃ তাজা কালোকেশী পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিন যেন মাটি বা ধুলা না থাকে। ছায়াই কিছুক্ষণ শুকিয়ে নিন যেন পাতায় অতিরিক্ত পানি লেগে না থাকে।
  • পেস্ট তৈরিঃ পাতা একটু পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন এবং এর সঙ্গে চাইলে ব্লেন্ড করতে পারেন।
  • তেল গরম করাঃ একটি পরিষ্কার পাত্রে এক কাপ পরিমাণ নারকেল তেল নিয়ে হালকা আচে গরম করতে শুরু করুন।
  • পেস্ট যোগ করাঃ তেল গরম হলে তাতে কালোকেশী  পাতার পেস্ট যোগ করুন এবং ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন যেন পেস্ট পুড়ে না যায়। আচ খুব বেশি রাখা যাবে না এখন হালকা আচে 15 থেকে 20 মিনিট ধরে রান্না করুন।
  • গন্ধ ও রঙের পরিবর্তনঃ কিছুক্ষন পর দেখবেন তেলের রং কালচে সবুজ হয়ে গেছে এবং পাতাগুলো শক্ত হয়ে গেছে। এটাই ইঙ্গিত দেয় যে তেল প্রস্তুত।
  • ছেকে নেওয়াঃ তেল ঠান্ডা হলে একটি ছাঁকনি বা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে পরিষ্কার বোতলে ভরে , রাখুন।

সংরক্ষণঃ এই তেল ১ থেকে ২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে যদি শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় রাখা হয়। ফ্রিজে রাখলে বেশিদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।

ব্যবহার বিধিঃ সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুলে এই তেল ম্যাসাজ করে এক থেকে দুই ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। ভালো ফলাফল পেতে রাতে লাগিয়ে রেখে দিনে শ্যাম্পু করে নিন।

বোনাস টিপসঃ
চুল পড়া বা পাকা চুলের সমস্যায় ভুগলে কালোকেশী তেলের সাথে কিছু উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
    • আমলকি তেল
    • ব্রাহ্মী তেল
    • মেথি গুঁড়া
এই উপাদানগুলো তেলের সাথে মিশিয়ে একটা হেয়ার গ্রোথ oil mix তৈরি করা যায়। যা চুল পড়া কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং পাকা চুলের সমস্যা দ্রুত দূর করে।

কালোকেশরী গাছের উপকারিতা

কালোকেশরী গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। কালোকেশরী গাছটি বিভিন্ন স্থানে কেশতী কেশরাজ, কেউটি, কাল সাঁতার, কালকেসিরিয়া বিভিন্ন নামে ডেকে থাকেন স্থানীয়রা। কালোকেশরী উদ্ভিদটি অত্যন্ত উপকারী একটি ঔষধি ঘাস। কালোকেশরী গাছ থেকে এক ধরনের রস বের হয় যা চুলকে অনেক বেশি কালো করতে সাহায্য করে। এইজন্য সঠিক কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায় জানাও জরুরী

কালোকেশরী এমন একটি উদ্ভিদ যার ফুল, ফল, পাতা, কাণ্ড সব কিছুই ব্যবহারযোগ্য। আপনি চুলের যত্নের জন্য এই পাতা যেমন ব্যবহার করতে পারেন তেমনি ভাবে আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতক্ষণ তো আমরা চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছি চলুন তাহলে এখন কালোকেশরী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
  • কালোকেশীর পাতা ফুল ও ফল বেটে রস তৈরি করে নিতে পারেন। যা নিয়মিত মাথায় দেওয়ার মাধ্যমে আপনার মাথা ঠান্ডা থাকবে, চুল পড়া কমবে এবং চুল ঘন কালো ও লম্বা করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে।
  • আপনার শরীরের কোন স্থান যদি কেটে যায় তাহলে কালোকেশী পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন এবং সে স্থানে লাগিয়ে রাখুন দ্রুততম সময়ের মধ্যে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আক্রান্ত স্থানের ক্ষত শুকাতেও কালোকেশী পাতা অত্যন্ত বেশি কার্যকরী।
  • এতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিসেফটি গুণ আছে। ক্ষত চুলকানি ফোড়া বা একজিমাই পাতার রস বা পেস্ট ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।
  • কালোকেশী তেল ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়, ত্বক হাইড্রেট রাখে। আন্টিইনফ্লেমেন্টরি গুণ সমৃদ্ধ কালকেশী যা ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রন দূর করতেও অনেক বেশি কার্যকরী।
  • পায়োরিয়া থাকলে কালোকেশী পাতা গুড়া করে নিয়ে মাজুনের মতো ব্যবহার করতে পারেন ২ থেকে ৪ মিনিট। আশা করছি পায়োরিয়া সেরে যাবে। এছাড়াও এটি মারী শক্ত করবে এবং মাড়িতে কোন ঘা থাকলে এই পাতার রস ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েকদিন মুখ ধুলেই ভালো হবে।
  • দৈনিক আপনি যদি কালোকেশী পাতার রস বেটে ১চা চামচ রস, আধ কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান তাহলে আপনার রক্ত পরিষ্কার হবে এবং সব ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ শরীর থেকে বের করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করবে। কালোকেশী পাতা রক্ত থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
  • মশার উপদ্রব্য নাই এমন জায়গা পাওয়া খুবই দুষ্কর। আপনার ঘরে যদি অতিরিক্ত মশার উপদ্রব্য থাকে তাহলে কালোকেশী পাতার রস ২চা চামচ পরিমাণ 500ml পানির সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘরের ভিতরে এবং বাহিরে পুরো জায়গায় স্প্রে করতে পারেন। এতে করে মশার আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং মশার উপদ্রব্য কমে যাবে।
  • লিভারের সুরক্ষার জন্য কালকেশী অত্যন্ত কার্যকরী একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন উদ্ভিদ। এটি লিভারটনিক হিসেবে কাজ করে। লিভারের যেকোনো ধরনের সমস্যার জন্য কালোকেশী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি লিভারের প্রদাহ কমায় লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং জন্ডিস দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
  • এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি বা সংক্রমনের বিরুদ্ধে কাজ করে। কালোকেশী কাশির প্রকোপ কমাতেও অনেক বেশি সহায়তা করে। যারা দীর্ঘদিন থেকে কাশির সমস্যায় ভুগছেন তারা কয়েকটি কালোকেশী পাতা বেটে নিয়ে খেতে পারেন এতে করে কাশি উপশম হবে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে এটি রক্তের শর্করার মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। কালোকেশী গাছ অনেক বেশি সহজলভ্য হওয়ায় সকলের জন্য একটি সাশ্রয়ী বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে।

কালোকেশী পাতার অপকারিতা

কালোকেশী পাতার অপকারিতা সাধারণত কম কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ এবং বহু প্রাচীনকাল থেকে নিরাপদ ভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার প্রাকৃতিক কার্যকরী উপাদান যা যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে যে কোন ভেষজ ঔষধ বা গাছের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে এবং সঠিক নিয়ম না মেনে ব্যবহার করা হয়। কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানব, তার আগে চলুন কালকেশী পাতার অপকারিতা গুলো জানা যাক।
  • পেটের সমস্যাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে এই পাতার রস বা পেস্ট গ্রহণ করলে বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা হতে পারে।
  • রক্তচাপ হ্রাসঃ কালোকেশী পাতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে হাইপোটেনশন (অতিরিক্ত রক্তচাপ কমে যাওয়া) সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই যারা রক্তচাপ কম হওয়ার সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদান কারী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণঃ কালোকেশী কিছু যোগও গর্ভের সংকোচন ঘটাতে পারে। এটি গর্ভপাত বা অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে তাই এই সময় পাতা বা রস খাওয়া নিষেধ।
  • অ্যালার্জি বা ত্বকে প্রতিক্রিয়াঃ কারো কারো ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। ফলে পাতার পেস্ট বা তেল লাগালে লালচে ভছ্যা, চুলকানি, জ্বালাপোড়া ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
  • লিভার এনজাইনে প্রভাব ফেলতে পারে (দীর্ঘ মেয়াদী অতিরিক্ত সেবনে)ঃ যদিও এটি লিভারের জন্য ভীষণ উপকারী তবে গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে বিশেষ করে সাপ্লিমেন্ট আকারে খেলে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
    • মিতব্যায়ী ব্যবহারই নিরাপদ।
    • প্রথমবার ব্যবহারের আগে সামান্য পরিমাণে খেয়ে বা লাগিয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
    • যদি কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
    • শিশু গর্ভবতী নারী ও যাদের আগে থেকেই রোগ আছে (যেমন কিডনি হৃদপিণ্ড লিভার) তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।

কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়

কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়। সৌন্দর্য পিপাসী মানুষের জন্য চুলের সঠিক যত্ন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই চুলের যত্ন থেকে শরীরের বিভিন্ন উপকারিতা পেতে মানুষ অনেক প্রাচীনকাল থেকেই এই ভেষজটি ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা কালোকেশী উদ্ভিদটি চিনেন না। কালোকেশী একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন উদ্ভিদ।
কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়
আমাদের দেশে পুকুরপাড়, রাস্তাঘাট, বন জঙ্গলে এই গাছটি হয়ে থাকে। কালোকেশী এক ধরনের বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর শাখা প্রশাখা গুলো লতানো হয়। এবং শাখা প্রশাখা গুলো এতটাই ভারী যে নিচের দিকে হেলে যায়। কালোকেশী  গাছের পাতা খুবই ছোট ছোট হয় এবং গারো সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এই গাছে ২ থেকে ৩টি ফুল ফোটে। 

কালো কেশরী গাছের ফুলগুলো সাদা সাদা রঙের দেখতে হয়। এই সাদা সাদা ফুলের ভেতরে খুবই ছোট ছোট বিজ থাকে। এই ফল কেটে মাটিতে পড়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চারা গজায়। কালোকেশী গাছকে অনেকেই ভৃঙ্গরাজের গাছের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। কালোকেশী গাছের ফুল সাদা রঙের হয় এবং ভৃঙ্গরাজ এর ফুলের রং মৌসুমী ভেদে তিনটি রঙের হয়ে থাকে। 

কালোকেশী গাছের পাতার কিনারা হালকা খাজ কাটাযুক্ত হয় এবং পাতায় স্পষ্ট শিরা দেখা যায়। পাতার আকৃতি লম্বাটে সরু বর্ষাকৃতি খসখসে এবং অমসৃণ। এর ডাটা নরম এবং সবুজ রঙের হয় মাটি ঘেঁষে বা নিচু হয়ে বেড়ে ওঠে। কালোকেশী পাতা চটকালেই একটা তীব্র ভেষজ গন্ধ বের হয়।

চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় টিপস

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার টাক মাথায় চুল গজানো নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক কৌতূহল এবং আগ্রহ ব্যাপক। চুল ঝরা সাধারণ একটি সমস্যা যা বিভিন্ন কারণবশত হতে পারে। এটি যেমন একটি শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার লক্ষণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তেমনি জীবনযাত্রার কিছু ভুল পদ্ধতি গুলোর কারণেও হতে পারে। তাই আপনি চাইলে চুলের যত্নে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস অনুসরণ করতে পারেন যা আপনার চুলকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
    • বেশি দরকার ছাড়া হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
    • ভেজা চুলে টাওয়াল বা গামছা দিয়ে বেশিক্ষণ পেঁচিয়ে রেখে দেবেন না।
    • ভেজা চুল আচরানো থেকে বিরত থাকুন কেননা সে সময় আমাদের চুলের গোড়া অনেক বেশি নরম থাকে।
    • যে সকল শ্যাম্পুতে কেমিক্যাল আছে তা ব্যবহার করবেন না।
    • চুল অনেক বেশি সময় ধরে টাইপ করে বেঁধে রাখবেন না। এতে আপনার চুল দুর্বল হয়ে পড়ে তাই চুল কেউ নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ দিন।
    • ভেজা চুল বাধা থেকেও বিরত থাকুন।
    • চুলে গরম পানি ব্যাবহার করবেন না।
    • তিন মাস অন্তর অন্তর চুলের অগ্রভাগ কাটা জরুরী কেননা চুলের অগ্রভাগ ফেটে গেলে চুল লম্বা হতে বাঁধাগ্রস্ত হয়।

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ চুলের যত্নে কোন কোন পাতা ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ চুলের যত্নে অনেক প্রাকৃতিক পাতা ব্যবহার করা যায় যেগুলো চুল পড়া রোধ করে চুল ঘন করা খুশকি দূর করা, চুল নরম ও উজ্জ্বল করার জন্য দারুণ কার্যকর। যেমন ভৃঙ্গরাজ পাতা, কেশুতি পাতা, জবাব পাতা, এলোভেরা পাতা, নিম পাতা, আমলকি পাতা, পুদিনা পাতা, কারি পাতা ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ কেশুতি পাতা চুলে লাগালে কি হয়?
উত্তরঃ কেশুতি পাতা চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও উপকারী ভেষজ উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি বহুদিন ধরে গ্রাম বাংলার লোকজও চিকিৎসা এবং সৌন্দর্যের চর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেশুতি পাতা চুলে পুষ্টি যোগায় এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার এর মত কাজ করে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল মসৃণ ও কোমল হয়, চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়ার হার কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুল পাকা রোধে বিশেষভাবে কার্যকরী।

প্রশ্নঃ ভৃঙ্গরাজের অপর নাম কি?
উত্তরঃ ভৃঙ্গরাজের অপর নাম বা সমার্থক নাম বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Eclipta alba বা Eclipta prostrata এবং এর ইংরেজি নাম False Daisy

প্রশ্নঃ কালোকেশী গাছের শিকড়ের উপকারিতা?
উত্তরঃ কালোকেশী গাছ একটি লতা জাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদ এবং ইউনানীতে বহুরোগে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা বীজ ফুল এবং শিকড় সবই ভেষজ গুণে ভরপুর এতে যৌথ ও বাতের ব্যথায় উপকারী চর্ম রোগে ব্যবহার করা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দূর করে, শরীর টিটক্স করতে সহায়তা করে।

প্রশ্নঃ কেশরাজ গাছকে ইংরেজিতে কী বলে?
উত্তরঃ কেশরাজ গাছ আসলে ভৃঙ্গরাজ গাছকেই বোঝানো হয়। যেটিকে আয়ুর্বেদে বলা হয় kesharaj--যার অর্থ চুলের রাজা। এটি চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হওয়ায় এই নামটি এসেছে। এর ইংরেজি নাম- False Daisy

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার থেকে শুরু করে, কেশরাজ/কালোকেশী পাতার গুনাগুন, চুলের যত্নে কালকেশী তেলের উপকারিতা, কালোকেশী তেল তৈরি করার নিয়ম, কালোকেশরী গাছের উপকারিতা, কালোকেশী পাতার অপকারিতা, কালোকেশী/ কেশরাজ গাছ চেনার উপায়, চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস, চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা সবসময় আমাদের ভরসার জায়গা। আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে কালোকেশী ব্যবহার করা সত্যিই অসাধারণ। চুলের যত্নে নিয়মিত সঠিক উপায়ে কালকেশী ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। এটি শুধু চুলের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে না বরং ভেতরেও শান্তি নিশ্চিত করবে। চুলের সঠিক যত্নে প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় গুলোর মধ্যে নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক খাদ্যাভাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের এই নিয়ম গুলো মেনে চলুন এবং চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ঝলমলে ঘন কালো এবং লম্বা করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url